মেয়েদের প্রথম ঋতুস্রাবের শুরুতে বিলম্বের কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

রজস্রাবে বিলম্ব (Delayed Menstruation) :- নারীদের রজস্রাবে সাধারণত দুই ভাবে বিলম্ব দেখা দেয়। প্রথমত: নারী যে বয়সে ঋতুবতী হবার কথা সেই বয়সে হয় না। সাধারণত গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ১৪/১৫ বয়সে নারী ঋতুবতী হয়ে থাকে। যদি তা না হয়, তবে তাকে প্রথম রজস্রাবের শুরুতে বিলম্ব বলা হয়। এ ছাড়া দ্বিতীয়তো: ঋতুস্রাব চলাকালে, ঋতুর শুরুতে বিলম্ব হয়ে থাকে। প্রতি ২৮ দিন পরপর নারীর ঋতুস্রাব হওয়ার কথা, তা না হয়ে ৩০/৪০ দিন পরে আবার কখনো বা এক মাস বন্ধ থেকে পরের মাসে ঋতু হয়ে থাকে। তাই মোটামুটি ভাবে ইহাকে  দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

  • প্রথম ঋতু প্রকাশ হতে বিলম্ব হওয়া।
  • ঋতুস্রাব চলা কালে ঋতুর বিলম্ব।
 

কিন্তু আজ আমরা শুধু “প্রথম ঋতু প্রকাশ হতে বিলম্ব হওয়া” সম্পর্কে জানব। এ কথা আগেই বলেছি যে – গ্রীষ্ম প্রধান দেশে সাধারণত নারীদের ১৩ হতে ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম ঋতুস্রাব হবার কথা তবে নিম্ন লিখিত কারণে বিলম্ব ঘটতে পারে :-

  • স্ত্রীজাতীর হরমোন বা লিউটিনাজির জাতীয় হরমোন নারীদেহে যৌবন আগমন ঘটায়। নারীর ঋতুর শুরুতে এর বিশেষ ভূমিকা থাকে, আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানত Posterior Pituitary গ্রন্থি এবং এড্রেনাল গ্রন্থির নিঃসৃত হরমোন। যদি নারীর ডিম্বাশয়ের হরমোন ঠিকমত নিঃসরণ না হয় অথবা অন্য দুটি গ্রন্থির নিঃসরণ কম হয় তাহলে উপযুক্ত বয়সে নারীর ডিম্বকোষ ও ডিম্ব ঠিকমত গঠিত হতে পারে না। এর ফলে প্রথম ঋতু সহজে শুরু হয় না।
  • নারীর জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের জন্মগত অপরিনতি বা ঠিকমতো বর্ধিত না হলে প্রথম ঋতু প্রকাশে বিলম্ব হয়ে পারে।
  • নারীর দেহে পুষ্টির অভাব এবং তার জন্য দেহের গঠন ঠিকমতো না হওয়ার কারনেও প্রথম ঋতু প্রকাশে বিলম্ব হয়ে পারে।
  • নারীর দেহে রক্তশুন্যতার রোগ থাকলে ঋতু প্রকাশে বিলম্ব হয়ে পারে।
  • প্রথম ঋতু শুরু হওয়ার আগেই যখন ডিম্বটি বা Premordial follicle টি হয়ে Graffian follicle হয়ে ডিম্বনীলাতে আসার সাথে সাথে যদি ঐ নারী কোন পুরুষের সাথে সংসর্গ বা মিলন করে তবে গর্ভবতী হয়ে যাবে। তার ঋতু শুরুতেই হবে না। তার প্রথম গর্ভ সঞ্চার হবে ও ঋতুর শুরুতে বিলম্ব মনে হবে।

মেয়েদের প্রথম ঋতুস্রাবের শুরুতে বিলম্বের লক্ষণসমূহ :-
নারীদের এই জাতীয় অবস্থা দেখা দিলে সাধারণত শরীর দুর্বল, কৃশ ও রক্তশুন্য হয়ে পড়ে। তার দেহে স্ত্রী জনোচিত গঠন হয় না। বক্ষ ঠিকমতো উন্নত হয় না এবং দেহের প্রয়োজনীয় অংশে মেদ জমে না। অনেক সময় দেহে রক্ত শুন্যতার ভাব অতি প্রকটভাবে দেখা দেয়। মাথা ভার, মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড় করাসহ দেহের নানা প্রকার অসঙ্গতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় চেহারাতে কিশোরী ভাব না এলে বাল্যভাবই বর্তমান থাকে। জরায়ু ও ডিম্বাশয় প্রভৃতির পূর্ণ ও স্বাভাবিক গঠন হয় না। এছাড়া শারীরিক অসুস্থতা, ডিম্বকোষের কোনরূপ পীড়া, যোনিদ্বারের আবরক পর্দার আচ্ছন্ন অবস্থা, সর্বদা ঘরে বসে থাকা, মনমরা অবস্থায় থাকা ইত্যাদি উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে।

কোমরে বেদনা ও টাটানি, তলপেটে পূর্ণবোধ ও বেদনা প্রভৃতি লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। যদি কোমরে বেদনা ও স্বাস্থের কোনরূপ বৈলক্ষন্য না ঘটে প্রথম ঋতুস্রাব প্রকাশ পেতে বিলম্ব হয় তাহলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যৌবনকালে স্ত্রীলোকের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন ঘটেও যদি ঋতুস্রাব না হয় তবে প্রপার হোমিও ট্রিটমেন্ট নিলে কিছু দিনের মধ্যেই তা ঠিক হয়ে যায়। কারণ মেয়েদের প্রথম ঋতুস্রাবের শুরুতে বিলম্বের পেছনে যে কারণগুলি বিদ্যমান থাকে তা যথাযথ হোমিও চিকিৎসায় একেবারে মূল থেকে দূর হয়ে যায় আর এরই সাথে রোগিনী পুরুপুরি সুস্থ হয়ে উঠে এবং সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *