গর্ভপাতের কারণ এবং লক্ষণগুলি কি কি ?

গর্ভপাত (Abortion) :- গর্ভের অপূর্ণ অবস্থায় ভ্রুণ বের হলে তাকে গর্ভপাত বলা হয়ে থাকে। যদি ভ্রুণ সাত মাস পর বের হয় তবে অনেক ক্ষেত্রে শিশু জীবত থাকে। একবার গর্ভস্রাব হলে পরবর্তী গর্ভেও গর্ভপাত হতে পারে। যে মাসে গর্ভস্রাব হয় সে সময় আসলে রোগীকে বিশেষ ভাবে সাবধানে থাকতে হয়। সাধারণত তৃতীয় মাসে, কখনো বা তার পূর্বে বা পরে গর্ভপাত হতে পারে। নারীর গর্ভ সঞ্চারের পর ভ্রুণটি জরায়ুতে ২৮০ দিন অর্থাৎ ৯ মাস ১০ দিন ধরে গঠিত হয়, তারপর শিশুর জন্ম হয়। ঠিক পূর্ণভাবে ভ্রুণ গঠিত না হয়ে তার আগেই যদি তা গর্ভ থেকে নির্গত হয় তবে তা বাঁচে না।
গর্ভপাত সাধারণত দু’ধরনের হতে পারে যথা :
  • আপনা থেকেই গর্ভপাত।
  • জোর করে গর্ভপাত ঘটানো।
সাধারণত সন্তান ভীতির জন্য আজকাল জোর করে গর্ভপাত ঘটানো হয়। অবশ্য অন্য কারনেও জোর করে ঘটানো হয়ে থাকে। যেমন – মায়ের দেহ অতি দুর্বল হলে সন্তান ধারণ করলে অনেক সময় জীবন বিপন্ন হতে পারে। প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তশুন্যতার লক্ষণ থাকলে হার্টফেল হওয়ার আশংকা থাকে। প্রসূতির একলামসিয়া রোগ থাকলে অথবা প্রসূতির শারীরিক বা মানসিক রোগ থাকলে সাধারনত চিকিত্সকদের পরামর্শ নিয়ে জোর করে গর্ভপাত ঘটানো হয়। তাছাড়া প্রসূতির যদি ভেনারেল কোন রোগ থাকে অথবা অতিরিক্ত সন্তান লাভের ইচ্ছা না থাকলে ইত্যাদির জন্যও অনেক সময় গর্ভপাত ঘটানো হয়।
গর্ভপাতের কারণসমূহ :- বিভিন্ন করনে প্রসূতির গর্ভপাত হতে পারে যেমন –
  • পড়ে গিয়ে কোনরূপ আঘাত লাগা, শারীরিক দুর্বলতা, গর্ভের প্রথমাবস্থায় জরায়ুর সাথে ভ্রুণের সল্প সংযোগ।
  • প্রচুর রক্তস্রাব, দীর্ঘকাল স্থায়ী প্রদর, স্রাব, গর্ভাবস্থায় স্বামী সহবাস, জরায়ুর অসম্পূর্ণ প্রসারণ।
  • জরায়ু মুখের শিথিলতা, রাত্রি জাগরণ, কাপড় কসে পড়া, আছার খেয়ে পড়া, অসমান পথে গাড়ী চড়া, ভারী কোন কিছু আলগানো।
  • কলেরা, বসন্ত, জ্বর, ডিপথেরিয়া প্রভৃতি সংক্রামক রোগ হওয়া।
  • শোক, দুঃখ প্রভৃতি মানসিক উদ্বেগ ইত্যাদি কারনেও গর্ভপাত হতে পারে।
  • জননতন্ত্রের ত্রুটি থাকলে, হরমোন সংক্রান্ত ত্রুটি থাকলে অনেক সময় গর্ভপাত হতে পারে।
  • তাছাড়া দেহে রক্তশুন্যতা, অপুষ্টি জনিত কারনেও গর্ভপাত হতে পারে।
  • হরমোনের অভাব ঘটলে প্রসুতি পূর্ণ সময় অর্থাৎ ২৮০ দিন পর্যন্ত সন্তানকে গর্ভে ধারণ করতে পারে না।
গর্ভপাতের লক্ষণসমূহ :- মাসিক ঋতুর পূর্বে শারীরিক অবস্থা যেরূপ হয় গর্ভস্রাবের সময়ও অনেকটা সেরূপ অবস্থা হয়ে থাকে। নড়াচড়া করতে বা কোন কাজকর্ম করতে চায় না। বিমর্ষ ভাব, ধীরে ধীরে রক্তস্রাব বৃদ্ধি পায়। কোমরে, তলপেটে বেদনার উদ্রেক হয় এবং বেদনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং যখন অধিক বেদনা দেখা দেয় তখন জল ভাঙ্গে এবং ভ্রুণ নির্গত হয়। গর্ভস্রাবে অনেক সময় প্রসূতির জীবন বিপন্ন হয়ে উঠে। নারী জীবনে ইহা একটি বিশ্রী রোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *