করোনা সহ অন্যান্য সকল রোগ সমস্যার সমাধান পেতে মধু ও কালোজিরার ব্যবহার বিধি জেনে নিনঃ


মধু ও কালোজিরা
※মধু কুরআনের আলোকে-’আর মৌমাছির পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানি নির্গত হয়, যা মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার।’সূরা নাহল:৬৯

হাদিসের আলোকে-হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন, কুরআন হলো যেকোন আত্মিক রোগের জন্য আর মধু হলো দৈহিক রোগের জন্য-ইবনে মাজাহ ।

কালোজিরা: ইসলামের দৃষ্টিতে রাসূল (সা:) এর যুগ থেকেই মুসলমানগণ কালোজিরার ব্যাপরে গুরুত্ব প্রদান করে আসছেন। এ ব্যাপারে একটি হাদিস তাদেরকে উৎসাহিত করেছে। হাদিসে এসছে, ’রাসূল(সা:) বলেছেন তোমরা কালোজিরার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করো। কেননা তাতে মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় রয়েছে।’- সহি বুখারি। মধুর ব্যবহার: মিষ্টিস্বাদের জন্য বিভিন্ন খাবারের সাথে মধুর ব্যবহার রয়েছে। সকালের নাশতা ও হালকা খাবারে মধু য়োগ করা যায়।

মধুতে ক্যালরি থাকায় মধু খাওয়ার পর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

এ প্রোটিন দেহের গঠন বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় পূরনে যথেষ্ট কার্যকর।

মধুর ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস শরীরের হাড় গঠনে সহায়ক।

মধুর ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম হ্নৎপিন্ডকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং বিভিন্ন এসিড পাকস্থলীর বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।

মধুতে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে, যার নাম ইনহিবিন।
করোনা ভাইরাস এর প্রতিষেধক

সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হয়ে থাকে কালোজিরা ৫ গ্রাম চিবিয়ে খাবার পর ১চা চামচ মধু গরম পানি সহিত মিশিয়ে খেতে হবে। ১০-১৫ দিন সেবন করলে করোনাভাইরাস এর প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে
※মধু পান অত্যন্ত উপযোগী: ফোড়া, ক্ষতস্থান শুকাতে পুড়ে গেলে কেটে গেলে ভেঙে গেলে ও মচকে গেলে মধুর প্রলেপ ভালো কাজ করে।

★ রূপচর্চায় মধু ব্যবহার: দীর্ঘকালের মুখের দাগ তুলতে ও লাবণ্য মসূণতায় মধু মেখে উপকার পাওয়া যায়।

পরিশ্রম ও গরমে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে পড়লে ঠান্ডা পানির সাথে লেবুর রস মিশ্রিত মধুর শরবত পান করলে দেহে উদ্যম ও সজীবতা ফিরে আসে।

বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতে মধুর রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার।
※মধুর উপদান: রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মধুতে রয়েছে প্রায় ৮১ ধরনের উপাদান।

মধুর পুষ্টিমান (প্রতি ১০০ গ্রাম)

নিন্মরুপ শক্তি : ৩০৪ কি. ক্যা.

প্রোটিন : ০.৩০ গ্রাম

ফ্যাট : ০.০০ গ্রাম

পানি: ১৭.১০ গ্রাম

বি২ : ০.০৩৮ মি. গ্রা.

বি৩ : ০.১২১ মি. গ্রা.

বি৫ : ০.০৬৮ মি. গ্রা.

বি৬ : ০.০২৪ মি. গ্রা.

বি৯ : ২ মা. মি. গ্রা.

ভিটামিন সি : ০.৫ মি. গ্রা.

ক্যালসিয়াম : ৬ মি. গ্রা.

আয়রন : ০.৪২ মি. গ্রা.

ম্যাগনেশিয়াম : ২ মি. গ্রা.

পটাশিয়াম : ০.৫২ মি. গ্রা.

সোডিয়াম : ৪ মি. গ্রা.

জিস্ক : ০.২২ মি. গ্রা.

ফসফরাস : ৪ মি. গ্রা.
※যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে মধু: দৈহিক ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য মধু গরম দুধের সাথে পান করলে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিদিন কালোজিরা মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে বা দৈনিক ২ চামচ আদার রস মধু দিয়ে খেলে প্রচুর পরিমানে যৌনক্তি বৃদ্ধি পায়।
বিভিন্ন রোগে ব্যবহার: সুস্বাস্থ: আপনি যদি আজীবন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান, তাহলে কালোজিরার তৈল আধা চামচ সকালের নাশতার পরে সেবন করলে আল্লাহর রহমতে বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাপদ থাকবেন।

※হাঁপানি: ১ চামচ কালোজিরার তৈল মধুর সাথে দৈনিক দুবার আহারের পরে ৪০ দিন সেব্য।
※বহুমূত্র: ১ চামচ কালোজিরার তৈল লেবুর রসের সাথে দৈনিক দুবার সেব্য।
※স্মরণক্তি: ১ চামচ পুদিনাপাতার রস অথবা কমলার রসের সাথে মিশিয়ে দৈনিক একবার চার সপ্তাহ সেব্য।
স্ত্রী রোগঃ ১ চামচ তৈল ও মধু দৈনিক দুবার আহারের পরে ১ মাস সেব্য।
পুরুষরোগ: ১ চামচ তৈল ও মধু দৈনিক দুবার আহারের পরে এক মাস সেব্য।

※ যেকোন জটিল রোগে অন্য ওষুধে উপকার না হলে: ১ চামচ তৈল ও মধু দৈনিক ২বার আহারের পরে সেব্য। রোগীর অবস্থার ওপরে মাথায় ও শরীরে মালিশ করতে হবে।

※ স্নায়ুবিক দুর্বলতা: ১ চামচ তৈল মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করলে সাথে সাথে উপকার পাওয়া যায়।

※ মাথা ও ঘাড় ব্যথা: ১ চামচ তৈল গরম পানির সাথে মিশিয়ে দৈনিক দুবার সেবন করুন ও ২-৩ বার মাথায় কপালেও ঘাড়ে কানসহ মালিশ করুন ইনশাআল্লাহ রোগ থেকে পরিত্রান পাবেন।

※বাত ও শরীর ব্যথা: ১ চামচ মধু তৈলের সাথে সেব্য। তৈল অল্প গরম করে আক্রান্ত স্থানে জোরে জোরে মলিশ করলে দুই সপ্তাহে উপকার পাবেন। দীর্ঘদিন এর রোগ থাকলে ধুতরাপাতার রস ও তৈল একত্রে মালিশ করলে সাথে সাথে ব্যাথা কমে যায়।
※ তিলের দাগ ও মেছতা: দাগযুক্ত স্থানে আপেলের রস ও কালোজিরার তৈল দৈনিক দুবার মালিশ করুন ও আধা চামচ করে তৈল মধুর সাথে দৈনিক ২ বার মালিশ করুন ১৫ দিন।

※ সৌন্দর্যের জন্য: ১ চামচ কালোজিরার তৈল ও জয়তুন তৈল মিশিয়ে মুখমন্ডলে লাগিয়ে ১ ঘন্টা পর সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে রোজ ১ বার ব্যবহারে ৭ দিনে উপকার পাবেন।

※ চর্মরোগ:১ চামচ তেল কাঁচা হলুদের রসের সাথে অথবা মধুর সাথে দৈনিক ২বার সেব্য ও আক্রান্ত স্থনে দৈনিক ৩-৪ বার লাগান দুই সপ্তাহে শুকিয়ে যাবে। জটিল রোগীর ক্ষেত্রে কর্পূর ও শ্বেতচন্দন ঘষা তৈলের সাথে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিন তাহলে অল্প দিনে শুকিয়ে যাবে।
※ রানের চিপায়: রাতে আক্রান্ত স্থনে সাবান দিয়ে ধুয়ে মুছে তৈল মালিশ করে ঘুমান ও আধা চামচ করে তৈল মধুর সাথে দুবার ১ সপ্তাহ সেব্য।
※ চুলপড়া: প্রতিদিন গোসলের আগে লেবুর রস মাথায় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে চুল শুকিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে গোসল শেষে শুকনা মাথায় কালোজিরার তৈল ভালো ভাবে রোজ ১ বার ৫ দিনে ভালো ফল পাবেন।
※ চোখের সমস্যা: দৈনিক রাতে ঘুমানোর আধা ঘন্টা আগে এই তৈল চোখের পলকে লাগান এবং১ চামচ তৈল এক কাপ গাজর রসের সাথে অথবা ১ কাপ মধুর সাথে সেবন করুন কমপক্ষে ১ মাস ভালো ফল পাবেন।
※ উচ্চ রক্তচাপ: মধু ও তৈল ১ চামচ করে ১ কাপ গরম পানির সাথে মিশিয়ে দৈনিক সকালে খালি পেটে সেব্য। এই তৈল সেবনের আগে দুই কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে নেবেন এবং সমস্ত শরীরে মালিশ করে সূর্যের তাপে শুকাবেন।
※ ডায়রিয়া বা দাস্ত: ১চামচ তৈল ১ কাপ দুুধের সাথে মিশিয়ে দৈনিক দুবার সেব্য।
※ অনিদ্রা: ১চামচ তৈল রাতে শোয়ার সময় মধুর সাথে সেবন করুন ও মাথায় পানিসহ ব্যবহার করলে ঘুম ভালো হবে।

※ কর্ণপ্রদাহ: এই তৈল তুলা দিয়ে কানে ব্যবহার করুন ও ১ চামচ করে মধুর সাথে দৈনিক দুবার সেবন করুন । এক সপ্তাহে ফল পাবে।

※ মাথার উকুন সারানো: ধুতরাপাতা পানি দিয়ে পিষে রস করে গোসলের ২ ঘন্টা আগে মাথায় দিয়ে রাখুন গোসলের পর মাথা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । মাথা শুকালে কালোজিরার তৈল এভাবে ৭ দিন ব্যবহারেই উকুন চলে যাবে।

※ হাম বা পক্স: ১চা চামচ কালোজিরার তৈল সমপরিমাণ করলার রস ও ১০ ফোঁটা মধুর সাথে মিশিয়ে দৈনিক দুবার সাত দিনেই ফল পাওয়া যাবে।
※ জন্ডিস:১ চা চামচ তৈল ত্রিফলার শরবতের সাথে রোজ তিনবার অথবা মধুর সাথে সেব্য। এক থেকে দুই সপ্তাহে রোগী সুস্থ হবে ।
※ গ্যাস্ট্রিক ও পুরনো আমাশয়: ১চা চামচ মধুর ও তৈলের সাথে দৈনিক দুবার সেব্য।
অর্শ বা পাইলস: ১চা চামচ মধু কালোজিরার তৈলের সাথে দৈনিক দুবার সেব্য ও ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে।
※ স্বপ্নদোষ: ১ চা চামচ কালোজিরার তৈল ও মধু রোজ দুবার আহারের পরে এক মাস সেব্য ও মাথায় তৈল ব্যবহার করবেন।
※ হ্নদকম্পন: এক চামচ তৈল ৬ গ্রাম অর্জুন ছাল চুর্ণ ১ কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে দৈনিক দুবার সেবন করুন এবং বুকে তৈল মালিশ করুন। এই নিয়মে এক মাসে উপকার পাবেন। তবে বেশি দিন সেবনে আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা আছে ।
সূত্র:কুরআন –সহীহ্ হাদিস, ভেষজ বিজ্ঞানী বই ওNutrient data base,USA

লেখকঃ ডাঃ ইমতিয়াজ আদনান


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *