পিত্তথলিতে পাথর হওয়া একটি অতিপরিচিত রোগ গুলোর মধ্যে একটি, আত্মীয়স্বজনের কারো পিত্তথলিতে পাথর হয়নি বা এজন্য গলব্লাডার ফেলে দিতে হয়নি এমন লোক মনে হয় খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে। সত্যিই কি পাথর হয় না এগুলো অন্য কিছু। এসব কি সত্যিকারের পাথরের মতো, কিভাবে ওখানে গেলো ওসব এ জাতীয় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় আমাদের মনে।
হ্যাঁ সত্যি সত্যিই পিত্তথলিতে পাথর হয়। কোলেস্টেরল, ক্যালসিয়াম, বিলিরুবিন ইত্যাদির সংমিশ্রনেযে পাথর গুলো পিত্তথলিতে হয় তা দেখতে অনেকটাই রাস্তার পাথরের মতো। এদের কোনোটি ময়লাসাদা, কোনোটি হাল্কা বাদামী আবার কোনোটি একদম কুচকুচে কালো বর্ণের হয়।
সাধারনত স্থুলাকায় মানুষের এই রোগ বেশী হতে দেখা যায়, মহিলাদের মাঝেও এই রোগ হবার প্রবনতাবেশী। যারা চর্বি জাতীয় খাবার বেশী খান ৪০ এর কাছাকাছি বয়সে তাদের এই রোগ হবার সম্ভাবনাবেশী এমন একটা শক্ত ধারনা খুব প্রচলিত। পিত্তথলিতে পাথর হলে এতে প্রদাহ বা কলিসিস্টাইটিস হয়।তখন পেটের উপরের দিকে ডান পাশে তীব্র ব্যথা হয় যাকে অনেকে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যথা বলে থাকেন। এটা সাধারনত মিনিট খানেক স্থায়ী হয় তবে তা ঘণ্টা খানেক ও থাকতে পারে। ব্যথাটি পেটেরপিছনের দিকে, কাধে, পেটের মাঝ বরাবর এবং বুকের ভেতরেও ছড়িয়ে পরতে পারে। সেই সাথে বমিবমি লাগা বা বমি করে ফেলা, হাল্কা জ্বর এই সব উপসর্গও থাকতে পারে।

কলিসিস্টাইটিস এর ব্যথা অত্যন্ত তীব্র এবং এমন ব্যথা হলে সাথে সাথে রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাওয়া উচিত। হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন বা জেনারেল সার্জন উভয়েই এই রোগের বিশেষজ্ঞ সার্জন। প্রায় ৯৬% ক্ষেত্রেই হোমিও ট্রিটমেন্ট এর মাধ্যমে পিত্তপাথরী সমস্যা সেরে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষত্রে অপারেশন করা দরকার হয়ে পড়ে। রোগটি নিশ্চিত করার জন্য প্রথমেই পেটেরআল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষাটি করে নিতে হয়, সেই সাথে কিছু রক্তের পরীক্ষা, ইসিজি, এক্সরে এই সবপরীক্ষা করে দেখতে হয় ব্যথার অন্য কোনো কারন আছে কিনা। এছাড়া ধরনের রোগীর খুব গ্যাসের সমস্যা থাকে দেখে অনেক সময় পাকস্থলীর এন্ডোসকোপি পরীক্ষা করে দেখতে হয় তাতে আলসার হয়েছে কিনা। পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেক সময় এই রোগে কোলাঞ্জিওগ্রাম অথবা ই, আর, সি, পিপরীক্ষাটিও করিয়ে নেয়া হয়।
অনেক সময় পিত্তথলিতে পাথর হলেও রোগী কোনো প্রকার ব্যথা বা অন্য সমস্যা অনুভব করেনা। সাধারনত অন্য কোনো রোগের জন্য পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে এটা ধরা পরে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকই কলিসিস্টেকটমি না করে অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং ব্যথা হলে তবেই অপারেশন করাতে বলেন। তবে এই নিয়ে বিতর্ক আছে কারন অনেক দিন পাথর থাকা অবস্থায় ট্রিটমেন্ট না করালে তা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। এসব বিষয়ও বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে পিত্তথলিতে পাথর হলে ভালো এবং অভিজ্ঞ একজন হোমিও ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ট্রিটমেন্ট নেয়া জরুরি। কারণ ৯৬% ক্ষেত্রেই হোমিও ট্রিটমেনটে পিত্তপাথরী দূর হয়ে যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে যখন অপারেশন করা দরকার হয়ে পড়ে তখন একজন অভিজ্ঞ সার্জন কর্তৃক ল্যাপকলিরমাধ্যমে অপারেশন বা ল্যাপারোস্কপিক কলিসিস্টেকটমি করিয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
আগেই বলেছি প্রায় ৯৬% ক্ষেত্রেই কোন প্রকার অপারেশন ছাড়া পিত্তথলির পাথর নিরাময়ের সবচেয়ে সফল চিকিৎসা রয়েছে একমাত্র হোমিওপ্যাথিতে। হোমিও ঔষধসমূহ পিত্তথলির পাথরকে মোমের মত গুলিয়ে শরীর থেকে বের করতে সক্ষম। একজন ভালো হোমিওপ্যাথ খুব দক্ষতার সাথে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।