♦♦দ্রুত বীর্যপাত বন্ধ করতে সম্পর্কে জানুন

প্রি-ম্যাচিউর ইজেকুলেশন হল দ্রুত
বীর্যপাত। যদি নিয়মিত সঙ্গি এবং
সঙ্গিনীর ইচ্ছার চেয়ে দ্রুত বীর্যপাত
ঘটে অর্থাৎ যৌন সঙ্গম শুরু করার আগেই
কিংবা যৌনসঙ্গম শুরুর একটু পরেই
বীর্যপাত ঘটে যায়- তাহলে যে
সমস্যাটি বুঝা যাবে তার নাম প্রি-
ম্যাচিউর ইজেকুলেশন। প্রি-ম্যাচিউর
ইজেকুলেশন একটি সাধারণ যৌনগত
সমস্যা। প্রতি ৩ জন পুরুষের মধ্যে ১ জন এ
সমস্যায় ভোগে থাকেন।
একসময়ে ধারণা করা হতো, প্রি-
ম্যাচিউর ইজাকুলেশন বা দ্রুত
বীর্যপাতের কারণ হলো সম্পূর্ণ
মানসিক; বর্তমানে বিশেষজ্ঞদের
মতে, প্রি-মেচিউর ইজেকুলেশন বা দ্রুত
বীর্যপাতের ক্ষেত্রে শারীরিক
বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে দ্রুত বীর্যপাতের
সাথে পুরুষত্বহীনতার সম্পর্ক রয়েছে।
বর্তমানে অনেক চিকিৎসা
বেরিয়েছে- যেমন বিভিন্ন ওষুধ,
মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং ও
বিভিন্ন যৌনপদ্ধতির শিক্ষা। এগুলো
বীর্যপাতকে বিলম্ব করে আপনার ও
আপনার সঙ্গিনীর যৌনজীবনকে মধুর
করে তুলবে। অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে
সমন্বিত চিকিৎসা খুব ভালো কাজ
করে।
উপসর্গঃ
পুরুষের বীর্যপাত হতে কতটা সময় নেবে
সে ব্যাপারে চিকিৎসাবিজ্ঞানে
আদর্শ মাপকাঠি নেই। দ্রুত বীর্যপাতের
প্রাথমিক লক্ষণ হলো নারী-পুরুষ উভয়ের
পুলক লাভের আগেই পুরুষটির বীর্যপাত
ঘটে যাওয়া। এ সমস্যা সব ধরনের
যৌনতার ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।
এমনকি হস্তমৈথুনের সময়ও কিংবা শুধু
যৌনমিলনের সময়ও।
প্রি-ম্যাচিউর ইজেকুলেশনকে
সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা হয়-
এক. প্রাইমারি প্রি-ম্যাচিউর
ইজেকুলেশন : এটি হলো আপনি যৌন
সক্রিয় হওয়া মাত্রই বীর্যপাত ঘটে
যাওয়া।
দুই. সেকেন্ডারি প্রি-ম্যাচিউর
ইজাকুলেশন : এ ক্ষেত্রে আগের বা প্রথম
দিকের যৌনজীবন তৃপ্তিদায়কই ছিল,
বর্তমানে দ্রুত বীর্যপাত ঘটছে।
কারণঃ
কী কারণে দ্রুত বীর্যপাত হচ্ছে তা
নিরূপণ করতে বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একসময়
ধারণা করা হতো, এটা সম্পূর্ণ মানসিক
ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে জানা যায়,
দ্রুত বীর্যপাত হওয়া একটি জটিল বিষয়
এবং যার সাথে মানসিক ও জৈবিক
দু’টিরই সম্পর্ক রয়েছে।
মানসিক কারণঃ
কিছু চিকিৎসক বিশ্বাস করেন, প্রথম
বয়সে যৌন অভিজ্ঞতা ঘটলে তা এমন
একটি অবস্থায় পৌছে যে, পরবর্তী যৌন
জীবনে সেটা পরিবর্তন করা কঠিন
হতে পারে। যেমন-
* লোকজনের দৃষ্টিকে এড়ানোর জন্য
তড়িঘড়ি বা তাড়াতাড়ি করে চরম
পুলকে পৌঁছানোর তাগিদ।
* অপরাধ বোধ, যার কারণে
যৌনক্রিয়ার সময় হঠাৎ করেই বীর্যপাত
ঘটে যায়। অন্য কিছু বিষয়ও আপনার দ্রুত
বীর্যপাত ঘটাতে পারে। এর মধ্যে
রয়েছে:
পুরুষাঙ্গের শিথিলতাঃ যেসব পুরুষ
যৌনমিলনের সময় তাদের লিঙ্গের
উত্থান ঠিকমতো হবে কি না কিংবা
কতক্ষণ লিঙ্গ উত্থিত অবস্থায় থাকবে
এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত পুরুষের দ্রুত
বীর্যস্খলন ঘটে।
দুশ্চিন্তাঃ অনেক পুরুষের দ্রুত
বীর্যপাতের একটি প্রধান কারণ
দুশ্চিন্তা। সেটা যৌনকাজ ঠিকমতো
সম্পন্ন করতে পারবেন কি না সে
বিষয়ে হতে পারে। আবার অন্য
কারণেও হতে পারে।
দ্রুত বীর্যপাতের আরেকটি প্রধান কারণ
হলো অতিরিক্ত উত্তেজনা।
জৈবিক কারণঃ
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন,
কিছুসংখ্যক জৈবিক বা শারীরিক
কারণে দ্রুত বীর্যপাত ঘটতে পারে। এসব
কারণের মধ্যে রয়েছে-
* হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা
* মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান
( Chemicals of brain ) বা
নিউরোট্রান্সমিটারের অস্বাভাবিক
মাত্রা
* বীর্যস্খলনে অস্বাভাবিক ক্রিয়া
* থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
* প্রোস্টেট (Prostate) অথবা মূত্রনালীর
প্রদাহ ও সংক্রমণ (UTI)
* বংশগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
নিচের কারণগুলোর জন্যও দ্রুত বীর্যপাত
ঘটতে পারে-
* সার্জারি বা আঘাতের কারণে
স্নায়ুতন্ত্রের (Nervous system) ক্ষতি
হওয়া।
* মাদক বা নারকোটিকস কিংবা
দুশ্চিন্তার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ
ট্রাইফ্লুপেরাজিন প্রত্যাহার করা এবং
অন্য মানসিক সমস্যা থাকা।
বেশির ভাগ প্রি-ম্যাচিউর
ইজাকুলেশনের (Premature ejaculation)
ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক দু’টি
বিষয়ই দায়ী। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন প্রাথমিকভাবে সবচেয়ে দায়ী
হলো শারীরিক কারণ যদি সেটা
জীবনভর সমস্যা হয়ে থাকে (প্রাইমারি
প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন)।
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ঃ
দ্রুত বীর্যপাতে ঝুঁকি বাড়াতে পারে
যেসব বিষয় –
পুরুষাঙ্গের শিথিলতাঃ লিঙ্গ
ঠিকমতো উত্থিত না হয়, মাঝে মাঝে
উত্থিত হয় অথবা উত্থিত হয় কিন্তু
বেশিক্ষন এ অবস্থায় না থাকে তাহলে
দ্রুত বীর্যপাত ঘটার ঝুঁকি বেড়ে যেতে
পারে। যৌনসঙ্গমের সময় লিঙ্গের
উত্থান অবস্থা বেশিক্ষণ থাকবে না,
এমন ভয়ও দ্রুত বীর্যপাত ঘটাতে পারে।
স্বাস্থ্যগত সমস্যাঃ যদি এমন স্বাস্থ্যগত
সমস্যা থাকে যার কারণে
যৌনমিলনের সময় উদ্বেগ অনুভব করে
যথা- হৃদরোগ থাকে। এতেও দ্রুত
বীর্যপাতের ঘটনা ঘটতে পারে।
মানসিক চাপঃ আবেগজনিত কারণ
কিংবা মানসিক চাপ দ্রুত বীর্যস্খলনের
ব্যাপারে ভূমিকা রাখে।
ওষুধঃ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হিসেবেও দ্রুত বীর্যস্খলন ঘটাতে
পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ঃ
চিকিৎসক বিস্তারিত যৌন ইতিহাস
জেনে তার ওপর ভিত্তি করে দ্রুত
বীর্যপাত রোগ নির্ণয় করেন। চিকিৎসক
স্বাস্থ্যের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে
চাইতে পারেন। তিনি সাধারণ
শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেন।
পুরুষ হরমোনের (টেস্টোস্টেরন) মাত্রা
দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষাসহ আরো কিছু
পরীক্ষা করতে দিতে পারেন।
জটিলতাঃ
যদিও দ্রুত বীর্যপাত আপনার মারাত্মক
স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়ায় না,
কিন্তু এটা ব্যক্তিগত জীবনে ধস
নামাতে পারে। যেমন-
সম্পর্কে টানাপড়েনঃ দ্রুত বীর্যপাতের
সাধারণ জটিলতা হলো যৌনসঙ্গিনীর
সাথে সম্পর্কের অবনতি।
বন্ধ্যত্ব সমস্যাঃ দ্রুত বীর্যপাত মাঝে
মধ্যে বন্ধ্যাত্ব ঘটাতে পারে। যেসব
দম্পতি সন্তান নেয়ার চেষ্টা করছেন
সেটা অসম্ভব হতে পারে। যদি দ্রুত
বীর্যপাতের ঠিকমতো চিকিৎসা করা
না হয়, তাহলে সঙ্গি ও সঙ্গিনীর
দু’জনেরই বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার প্রয়োজন
হতে পারে।
চিকিৎসাব্যবস্থাঃ
দ্রুত বীর্যপাতের চিকিৎসাব্যবস্থার
মধ্যে রয়েছে- সেক্সুয়াল থেরাপি,
ওষুধপত্র ও সাইকোথেরাপি। অনেক
পুরুষের ক্ষেত্রে সমন্বিত চিকিৎসা
সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
সেক্সুয়াল থেরাপিঃ এ ক্ষেত্রে
চিকিৎসক বুঝিয়ে দেবেন
যৌনমিলনের সময় কী করতে হবে।
চিকিৎসক একটি নির্দিষ্ট সময়
যৌনমিলন থেকে বিরত থাকার কথা
বলতে পারেন। আরও কিছু পদ্ধতি
শিখিয়ে দিতে পারে।
ওষুধঃ দ্রুত বীর্যপাতের চিকিৎসায়
কিছু নির্দিষ্ট অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও
টপিক্যাল অ্যানেসথেটিক ক্রিম
ব্যবহার করা হয়। তবে এসব ওষুধ কখনোই
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার
করা উচিত নয়। ওষুধ প্রথমে অল্প মাত্রা
দিয়ে শুরু করতে হয়। এটি আপনার
লিঙ্গের অনুভূতিকে ভোঁতা করে
আপনার বীর্যপাত দেরিতে ঘটাতে
সাহায্য করে। পুরুষ সঙ্গীরা যখন এসব
ক্রিম ব্যবহার করেন তখন তাদের যোনির
সংবেদনশীলতা কমে যায়, এতে পুরুষ
সঙ্গীরা যৌনানন্দ লাভ করলেও তারা
তেমন যৌন আনন্দ লাভ করেন না।
সাইকোথেরাপিঃ এটা হলো
কাউন্সেলিং বা আপনার যৌনসমস্যা
নিয়ে চিকিৎসকের সাথে বিস্তারিত
কথা বলা ও পরামর্শ গ্রহণ করা। এ ধরনের
কথা বলায় আপনার দুশ্চিন্তা কমবে এবং
সমস্যার উন্নতি ঘটবে। অনেক দম্পতির
ক্ষেত্রে শুধু সাইকোথেরাপির মাধ্যমে
ভালো ফল পাওয়া গেছে।
প্রতিরোধঃ
দ্রুত বীর্যপাতের কারণে
যৌনসঙ্গিনীর সাথে ঠিকমতো
যোগাযোগ বন্ধন গড়ে উঠতে নাও
পারে। চরম পুলকে পৌঁছতে পুরুষের
তুলনায় নারীর দীর্ঘ উদ্দীপনার
প্রয়োজন হয় আর এই পার্থক্য একটা দম্পতির
মধ্যে যৌন অসন্তুষ্টি ঘটাতে পারে।
অনেক পুরুষ যৌনমিলনের সময় চাপ অনুভব
করেন বলে দ্রুত বীর্যপাতের ঝুঁকি
বেড়ে যায়।
নারী ও পুরুষ একে অপরকে বুঝতে পারলে
দু’জনের জন্যই যৌন আনন্দ লাভ করা সহজ
হয়। এতে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাও দূর হয়। যদি
সঙ্গিনীর কাছ থেকে যৌনসুখ লাভ না
করেন তাহলে তার সাথে
খোলামেলা আলাপ করুন। আপনাদের
মধ্যে সমস্যাটা কোথায় তা খুঁজে বের
করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের
সাহায্য নিন। এ ক্ষেত্রে সব লজ্জা ও
জড়তা ঝেড়ে ফেলে খোলা মনে
আলাপ করুন। এ সমস্যা খুবই সাধারণ এবং
এর চিকিৎসাও সুব্যবস্থা রয়েছে।যোগাযোগ করুণ ‘

image


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *