আপনারা অনেকেই হয়ত শুনে আসছেন যে – মায়ের দুধ শিশুর জীবনধারণ এবং পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য একটি উৎকৃষ্ট সুষম খাদ্য। জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব (আধা ঘন্টার মধ্যেই শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। পূর্ণ ৪ / ৬ মাস ১৮০ দিন) পর্যন্ত শিশুকে শুধু মাত্র (১ ফোঁটা পানিও না) মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এরপর পরিপূরক খাবারের পাশাপাশি ১৮ মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাইয়ে যেতে পারেন।
মায়ের বুকের শাল দুধ :-
শিশু জন্মের কিছুক্ষন পর হলুদাভ ঘন, আঁঠালো যে দুধ বেরিয়ে আসে একেই শালদুধ বা কোলস্ট্রাম বলা হয় । প্রথম ১২ ঘন্টার ভিতরের দুধ কে Transitional Milk এর পরের তিন দিনের ভিতরের দুধ কে Mature Milk এবং সব মিলিয়ে ৯/১৩ দিনের দুধ কেই শাল দুধ বলা হয় ।
মনে রাখবেন যদি ও ইহা পরিমাণে খুব কম কিন্তু ইহাই একটি শিশুর জন্য যথেষ্ট ,কোন অবস্থাতেই এই দুধ পেলে দিবেন না । পরে শিশু বুকের দুধ টানার সাথে সাথে প্রলোক্টেনের মাধ্যমে খুবই দ্রুত মায়ের স্থনে প্রচুর দুধ আসতে থাকবে । অর্থাৎ শিশু যতই বুকের দুধ টানতে থাকবে তথই মায়েদের বুকের দুধ বাড়তে থাকবেই পর্যায় ক্রমে ১৩ দিন পর্যন্ত এই শাল দুধ পরে নর্মাল দুধে পরিণত হবে ( সাধারণত প্রথম তিন দিনের শাল দুধ শিশুর জন্য খুবই মূল্যবান , প্রমান হিসাবে নিম্নে দেওয়া আছে )।
- মায়ের দুধে 0.9 প্রোটিন আছে
- যারা মায়ের দুধ ৬ হতে দুই বছর পর্যন্ত খেয়ে বড় হয়েছেন তাদের শরীরের এন্টিবডি শক্তি অন্যান্যদের চাইতে গড়ে ১০% বেশী ( নির্ভর মা বাবার ডি এন এ গ্রোথ রেইটের উপর, জিন টেকন )
- মায়ের দুধে মাত্র ১৬% ফেট ( যেখানে অন্যান্য পশুর দুধে ৮২% বিদ্যমান-Colostrum has 2g (0.7 ounces)/100ml (3.38 ounces) of fat, mature milk has 4 (.01 ounces)-4.5g (.16 ounces)/100ml (3.38 ounces) of fat. ) সেই হিসাবে খুবি উৎকৃষ্ট
- মায়ের দুধ শিশুর হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক কারন এতে Colostrum একটি লো ভলিউম যোক্ত শিশু খাবার এবং খুবই সহজে হজম উপযোক্ত সব ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ উপাধানে ভরপুর
- শাল দুধ একটি ফ্যাট সলিবুল লো ফেটি খাবার এবং সব কয়টি ভিটামিন যোক্ত পানির সাথে সহজে মিশ্রিত খাবার
- মায়ের বুকের শাল দুধে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কনিয়াম ও এন্টি টক্সাইড আছে যা রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ
- মায়ের বুকের শাল দুধে প্রচুর সোডিয়াম , পটাসিয়াম , ক্লোরাইড, জিঙ্ক , caretenoids এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ইমোনগ্লোবিউলিন বিদ্যমান
- মায়ের বুকের শাল দুধে বিশেষ কিছু প্রতিরোধ করার মত খনিজ উপাধান মিশ্রিত যা নবজাতক শিশুকে নব্জাতিক মানসিক স্ট্রেস, কিডনির বিভিন্ন দুর্বলতা জনিত সমস্যা, ব্যাক্টোরিয়া ভাইরাস প্রতিরোধক ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন alpha-lacto albumin এমাইনো এসিড সরবরাহ করে হাড় মজবুত করতে ক্যালসিয়াম এবং জিঙ্ককে বিশেষ সহায়তা করে ।
- মায়ের দুধ থেকে লেক্টোফেরিন বেশী উৎপাদন হয় বিধায় মায়ের স্থনের পেশী সমূহের একটি ক্যানসার প্রতিরোধক উপাদান হিসাবে স্বীকৃত (lactoferrin is found in abundance )
- মায়ের দুধের beta-lacto globulin অন্যান্য দুধের চাইতে বেশী শক্তিশালী বিধায় ইহা এন্টিজেনিক এবং কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের (CNS) দ্রুত বৃদ্ধি কারক উপাদান মিশ্রিত খাবার
- মায়ের দুধের ফ্যাটি এসিড (including DHA and AAiron transfer agent ) লেক্টোস, হরমোন, ও অন্যান্য শরীর বৃদ্ধি কারক মিনারেল সমূহ মস্থিস্কের সাইকোমটর ব্যাবস্থাপনা কেখুব তাড়াতাড়ি উন্নীত করে বিধায় অদুর ভবিষ্যতে শিশুর বাত ব্যাথা জাতীয় অসুখে কম ভোগেন ১২- ৯৮% গ্লোবিউলাস সমৃদ্ধ মায়ের বুকের দুধে বিদ্যমান থাকায় মায়ের বুকের দুধ ফেটি এসিড সম্পন্ন সম্পূর্ণ নেচারেল স্টেরিলাইজড, কেন না তা থেকে phospholipids উৎপাদন করে ( বিশেষ করে কোলেস্টারল )
- সম্প্রতি দেখা গেছে মায়ের বুকের দুধে যে লেক্টোস সুগার থাকে তার galactose, fructose, এবং oligosaccharides সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ বিধায় শিশু শরীরের ক্যালসিয়াম এবং আয়রন বৃদ্ধি করে ৪০% বেশী সাধারণ দুধের চাইতে এবং ৩১% বেশী শক্তি যোগায়ে থাকে
- Colostrums দুধে ভিটামিন K প্রথমত অবস্থায় বেশী থাকে এবং ভিটামিন A থাকে দ্বিগুণ সাধারণ দুধের চাইতে
- সম্প্রতি ভিটামিন E ও পাওয়া গিয়েছে মায়ের বুকের দুধে
- মায়ের দুধের যে ভিটামিন ডি আছে তা মাত্র ১০ মিনিটে সারা দেহে শোষণ করার ক্ষমতা রাখে অথচ প্রকৃতির ভিটামিন ডি সময় নেয় কয়েক ঘন্টা
- মায়ের দুধের লেকটোস শিশুদের অন্ত্রের Lactobacillus bifida কে বিশেষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে বিধায় শিশুর হজম শক্তি সুন্দর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে –
- মায়ের দুধের polyunsaturated fatty acids (DHA and AA ) মস্থিস্ক, চোখের জ্যোতি ও স্নায়ুর সেন্সরশিপ ক্ষমতা অত্তান্ত বেশী ।
- মায়ের দুধে ফ্লোরিন , সেলিনিয়াম, ক্রোমিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম , molybdenum, নিকেল সব ধরণের সদ্য আবিষ্কৃত খনিজ বিদ্যমান
- মায়ের দুধের মেক্রোফেগাস, লিম্পসাইট, নিট্রোফিল, ও অন্যান্য কোষের বিভাজন ক্ষমতা অনেক বেশী বিধায় মায়ের বুকের দুধ সেবনকারী শিশুর শরীরে এন্টিবডি তৈরির ক্ষমতা সাধারণ শিশুর চাইতে ২০% বেশী থাকে
- মায়ের দুধের গ্রোথ হরমোনের সকল উপাদান সহ আর ও অনেক অজানা রহস্য বিদ্যমান ( including epidermal growth fact (EGF) and nerve growth factor (NGF) গবেষণাধীন আছে )
- মায়ের দুধে ই- কোলাই ও ফাঙ্গাই প্রতিরোধক কেন না প্রচুর পরিমাণে আছে এবং তখন SigA উৎপাদন করে মায়ের মেমোরি গ্লেন্ড থেকে
- মায়ের দুধে বেশী মিউসিন থাকে বিধায় সাধারণ দুধের চাইতে দ্বিগুণ রোগ প্রতিরোধক ( direct protective agents, anti-oxidants, and enzymes ) বা ইপিডারমেল গ্রোথ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় , শ্বাসতন্ত্র ও পরিপাক তন্ত্র সহ প্রায় সকল ধরণের অসুখেই বিশেষ সহায়ক (DNA synthesis ) ।
অর্থাৎ পরীক্ষা ও গবেশনা থেকে এ কথার বলার অপেক্ষা রাখেনা একজন সুস্থ মায়ের দুধ একটা শিশুর জন্য কত টুকু উপকারী এবং সর্বশেষ তথ্য মতে এও প্রমাণিত হয়েছে যে শিশু তার মায়ের বুকের দুধ সেবন করে বড় হয় সেই শিশু তার মায়ের প্রতি ২০% বেশী আবেগ ও কর্তব্য পরায়ন হয় , মায়ের বুকের দুধ ছাড়া বড় হওয়া শিশুদের চাইতে । অন্য এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে উক্ত বুকের দুধ সেবন কারী শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মেমোরি শক্তি ১০% বেশী থাকে ।
কেমিক্যাল কম্পোজিশন হিসাবে মায়ের দুধে কি কি থাকে :-
প্রোটিন :-
Protein (g/100 ml) হিসাব অনুসারে – কেসিওন casein 0.4% + লেক্টাল ব্র lactalbumin 0.3%, লেক্টোফেরিন lactoferrin (apo-lactoferrin) 0.2% + IgA 0.1% + IgG 0.001% +আইসোজাইম lysozyme 0.05% + সিরাম এলবোমিন serum albumin % 0.05+ বি লেক্টোগ্লোবিউলিন ß-lactoglobulin ইত্যাদি –
Protein (g/100 ml) হিসাব অনুসারে – কেসিওন casein 0.4% + লেক্টাল ব্র lactalbumin 0.3%, লেক্টোফেরিন lactoferrin (apo-lactoferrin) 0.2% + IgA 0.1% + IgG 0.001% +আইসোজাইম lysozyme 0.05% + সিরাম এলবোমিন serum albumin % 0.05+ বি লেক্টোগ্লোবিউলিন ß-lactoglobulin ইত্যাদি –
শর্করা বা শক্তি :-
Carbohydrate (g/100 ml) হিসাব অনুসারে ঃ- লেকটোস lactose 7% + oligosaccharides 0.5% + খনিজ Minerals (g/100 ml)ঃ- ক্যালসিয়াম calcium 0.03% + ফস্ফরাস phosphorus 0.014% + সোডিয়াম sodium 0.015% + পটাসিয়াম potassium 0.055% + ক্লোরিন chlorine 0.043% ইত্যাদি
Carbohydrate (g/100 ml) হিসাব অনুসারে ঃ- লেকটোস lactose 7% + oligosaccharides 0.5% + খনিজ Minerals (g/100 ml)ঃ- ক্যালসিয়াম calcium 0.03% + ফস্ফরাস phosphorus 0.014% + সোডিয়াম sodium 0.015% + পটাসিয়াম potassium 0.055% + ক্লোরিন chlorine 0.043% ইত্যাদি
এ ছাড়া ও যা যা থাকে :-
জিঙ্ক , কোপার, লৌহ (μg 300 ) , ভিটামিন এ ( IU 2230 ), ভিটামিন ডি ( IU 22 24 ) , ভিটামিন ই ( IU 2.3 ), ভিটামিন কে ( ug 2.1 ) , থায়োমিন (vitamin B,), ug 210, রিবোফ্লোবিন (vitamin B2), μg 350 , পাইরোডক্সিন (vitamin B6), ug 93 , নিসিন mg 1.5 , বায়োটিন ug 4 , পেন্থনিক এসিড mg 1.8 , ভিটামিন বি ১২ ug 1 4 , এস্কারবিক এসিড mg 40
জিঙ্ক , কোপার, লৌহ (μg 300 ) , ভিটামিন এ ( IU 2230 ), ভিটামিন ডি ( IU 22 24 ) , ভিটামিন ই ( IU 2.3 ), ভিটামিন কে ( ug 2.1 ) , থায়োমিন (vitamin B,), ug 210, রিবোফ্লোবিন (vitamin B2), μg 350 , পাইরোডক্সিন (vitamin B6), ug 93 , নিসিন mg 1.5 , বায়োটিন ug 4 , পেন্থনিক এসিড mg 1.8 , ভিটামিন বি ১২ ug 1 4 , এস্কারবিক এসিড mg 40
মায়ের দুধে জিবানু বিরোধী যে সব উপাদান বিদ্যমান :- সিক্রেটরি secretory IgA, IgM, IgG – লেক্টফেরইন lactoferrin , আইসজাইম lysozyme , লিউকোসাইট leucocytes , bifidus factor , লিপিড ও ফ্যাটি এসিড , এন্টিভাইরাল মিউসিন GAGs , oligosaccharides , ইফিডারমিল (EGF) , (NGF) , ইনসুলিন (IGF) , taurine , পলিএমাইনেস polyamines , সাইটোকিন্স এবং এন্টি ইনফ্লেমেটারি ফেক্টার , টিউমার নেক্রসিস ফেক্টার , ইন্টারলিউকিন্স , ইন্টারফারন-জি , এ১ এন্টিসাইমোট্রিপ্সিন , এ১ এন্টিরেপ্সিন , স্টিমুলেটিং বাইল এসিড, লাইপেস লিপ্র প্রোটিন , ট্রান্সফরটার হরমোন , ফলাক্টিন , থাইরয়েড হরমোন , করটি কস্টারয়েড ACTH , অক্সিটোসিন , কেলসিটনিন , পেরাথায়রয়েড হরমোন , ইরিথ্রোপ্রটিন , কবালামিন, থাইরক্সিন ,
ভাইরাস বিরোধী :- এন্টি ভাইরাস (e.g., HIV) ট্রপ্সিন , আফ্লাটক্সিন , তড়েন্স ফ্যাটি এসিড , নিকটিন, কফিন , d -sleep peptides , রেডিও আইস্টপিস , DNA, RNA ইত্যাদি ।
মায়ের জন্য বুকের দুধ আরো যে সকল উপকারে আসে :-
জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে মায়ের দুধ দিলে পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত অক্সিটসিন জরায়ুকে সংকুচিত করে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে ও জরায়ুর প্লেসেন্টা খুব তাড়াতাড়ি পরে যেতে সাহায্য হয় । ঘন ঘন মায়ের দুধ খাওয়ালে মাসিক পুনরায় শুরু হতে দেরি হয় এবং পরবর্তী গর্ভধারণ বিলম্বিত হয়। ( যদি ও বাচ্চা প্রসবের পরবর্তী ৭ মাস ১৩ দিন পর পুনরায় অনেকের মাসিক স্রাব দেখা না দিয়ে ও গর্ভধারণের সম্বাভনা আছে ১৭% , তাই এর উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিৎ নয় ) । গর্ভ-পরবর্তী বিষণ্নতা কমে গিয়ে আবেগ বেড়ে যায় – ডিম্ব কোষ ও স্থন ক্যানসার হওয়ার সম্বাভনা ৪০% কমে যায়।