অতিরজ বা মেট্রোরেজিয়া (Metrorrhagia) :- নারীদের মেট্রোরেজিয়া এবং মেনোরেজিয়ার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য আছে। কিন্তু বাংলায় ইহাদের অর্থ হলো অতিরজ। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মেট্রোরেজিয়া এবং মেনোরেজিয়ার মধ্যে লক্ষণগত পার্থক্য বিদ্যমান। নারীদের যখন ঠিক নিয়মিত সময়ে মাসিক ঋতুস্রাব হয় এবং অধিক পরিমানে স্রাব হয় তখন তাকে মেনোরেজিয়া বলা হয়। আবার যখন নিয়মিত মাসান্তে অর্থাৎ ২৮ দিন অন্তর ঋতু স্রাব না হয়ে অন্য সময় বেশি পরিমানে বা অন্য কোন কারণে অধিক পরিমানে জননেদ্রিয় হতে রক্ত স্রাব হয় তখন তাকে মেট্রোরেজিয়া বলে।
অতিরিক্ত রজস্রাব বা মেট্রোরেজিয়ার কারণ :- ইহা জরায়ু ও স্ত্রী জননেদ্রিয়ের একটি প্রধান রোগ এবং নানা প্রকার কারণে এই রোগটি সৃষ্টি হতে পারে। যেমন – জরায়ু এবং যোনি গাত্রে টিউমার হলে, জরায়ু গ্রীবার ক্যান্সার বা ঐ জাতীয় রোগ হলে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ডিম্বকোষ বা ডিম্বনালীর পীড়া বা প্রদাহ হলে, জরায়ুর স্থানচ্যুতি হলে, প্রথম রজস্রাব বিলম্ব হলে, দেহের হরমোন ক্রিয়ার গোলযোগ হলে বা হরমোন যথাযথভাবে হরমোন নিঃসরণ না হলে ইহা দেখা দিতে পারে। এছাড়া গর্ভধারণের সময় কোন স্ত্রীলোকের প্রথম মাসে রজস্রাব হলে গর্ভপাতের লক্ষণ বুঝায়। সময় হোক আর অসময় হোক – সন্তান ভুমিষ্ট হবার পর অনেকক্ষণ ধরে কষ্টকর প্রসব বেদনার পর সন্তান হয়ে অথবা খুব শীঘ্র শীঘ্র ও জোরে জোরে সন্তান বের হওয়া ও ফুলের কিছু অংশ জরায়ুর মধ্যে থাকা অথবা জরায়ুর মধ্যে বড় একটা রক্তের চাপ আটকে থাকা ইত্যাদি কারণে প্রচুর পরিমানে রক্ত স্রাব হতে পারে। যারা সন্তানকে দুধ পান না করায় তাদের মধ্যে কারো কারো এবং জরায়ুর কোন কোন প্রকার প্রদাহ হতে অত্যন্ত রজস্রাব হয়। এছাড়া টাইফয়েড, বসন্ত, কলেরা, ইত্যাদি পীড়া ভোগকালে কখনো কখনো জননেদ্রিয় হতে অতিরিক্ত রজস্রাব হয়।
অতিরিক্ত রজস্রাব বা মেট্রোরেজিয়ার লক্ষণ :–
- রজস্রাব এক একবার স্রোতবেগে দমকা বের হয় আবার কখনো কখনো অনবরত স্রাব চলতে থাকে।
- মুখমন্ডল ও চেহারা ফ্যাকাশে এবং শরীর ঠান্ডা হিমাংগ হয়ে আসে, উদ্বেগ, অস্থিরতা বৃদ্ধি হয়।
- তলপেটে প্রসব বেদনার মত ব্যথা অনুভূত হয়, বমি বমি ভাব দেখা দেয়, মূর্ছা যায়, শ্বাস প্রোশ্বাসে কষ্ট হয়।
- শীঘ্রই রক্তহীনতার ভাব দেখা দেয়, চোখে অন্ধকার দেখে, কানে ভো ভো শব্দ হয়, নাড়ী ক্ষীন হয়।
- মাসিক বা ঋতুর সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমানে ঋতুস্রাব হয়। কখনো বা ঋতু বেশি দিন বন্ধ থাকে তারপর আবার ঋতু হয় এবং বেশি পরিমানে হয়।
- কখনো কালচে পদার্থ স্রাবের সাথে বের হয়ে আসে। আলস্য, হাইতোলা এবং গা মেজ মেজ করা লক্ষণ প্রকাশ পায়।
- পেটে পিঠে এবং কোমরে অত্যধিক বেদনা দেখা দিতে পারে। ক্ষুধাহীনতার ভাব ও অরুচি দেখা দেয়, এ ছাড়া পরিপাক ক্রিয়ার গোলযোগ, অম্ল, অজীর্ণ, উদরাময়, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
- সর্বদাই গা শীত শীত করে, হাত পা ঠান্ডা বোধ হয়, মারাত্মক দুর্বলতার ভাব সৃষ্টি হতে পারে, চোখে দেখা, কানে কম শোনা ইত্যাদি লক্ষণও অনেকের ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়।
- শারীরিক দুর্বলতা ও কৃশভাব আবার কখনো বা স্থুলকায় হতে পারে। শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে।
প্রকাশিত কিছু জটিল উপসর্গ :- কখনো কখনো অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার পর রোগী এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে তা থেকে লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। ব্রেনের এনিমিয়া, মুর্চ্ছা প্রভৃতি হতে পারে। কখনো কখনো শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পেতে পারে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ জাতীয় রোগে ভুগলে রক্তহীনতার দোষে রোগিনীর জীবন সংশয় হয়ে উঠতে পারে। তাই কোনো প্রকার অবহেলা না করে শুরুতেই ভালো এবং অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিত্সকের সাথে যোগাযোগ করে যথাযথ ট্রিটমেন্ট নিন, খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবেন । নারীদের অতিরজ মেট্রোরেজিয়া (Metrorrhagia) নির্মূলে সর্বাধিক কার্যকর চিকিৎসা হোমিওপ্যাথিতে বিদ্যমান। অতিরজের নতুন পুরাতন যে কোন জটিল পর্যায়ে প্রপার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিলে যাবতীয় কষ্টকর উপসর্গ নির্মূল হয়ে রোগিনী সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে থাকে।