♦♦ অর্শ বা পাইলস রোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা – Piles or Hemorrhoids and Homeopathy

image

অর্শঃএটি মলদ্বারের একটি জটিল রোগ। এ রোগে মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরে, চারপাশে বা একপাশে, একটি বা একাধিক, গোলাকৃতি বা সুচাল গুটিকা দেখা দেয়। এ গুটিকাগুলোকে ‘বলি’ বা ‘গেজ’ বলা হয়। পায়খানা করার সময় এ বলিগুলো থেকে অভ্যন্তরীণ সমস্যার অনুপাতে কারো অধিক পরিমাণে, কারো স্বল্প পরিমাণে রক্ত যায়। আবার অনেকের রক্ত যায়ই না।সৃষ্টির ইতিবৃত্তঃপ্রতিনিয়ত আবহাওয়া ও খাদ্যাদি থেকে নানা রকম বিষ ও রোগ জীবাণু আমাদের দেহের ভেতরে প্রবেশ করে। শক্তিশালী জীবনীশক্তি এ বিষসমূহের কিছু দেহাভ্যন্তরে ধ্বংস করে ও কিছু পায়খানা প্রস্রাব ও ঘর্ম ইত্যাদি স্বাভাবিক স্রাবের মাধ্যমে বাইরে বের করে দিয়ে দেহকে সুস্থ রাখে। এমন কিছু জীবাণু আছে যেগুলোকে জীবনীশক্তি ধ্বংসকরতে পারে না এবং নিষ্কাশিত করাও জীবনীশক্তির সামর্থ্য হয় না। সে জীবাণুগুলো দেহের মধ্যকার ত্রিদোষ (সোরা, সিফিলিস, সাইকোসিস)-এর যে কোনো দোষ বা দোষসমূহের দ্বারা প্রবল শক্তি অর্জন করে এবং মারাত্মক ব্যধির সৃষ্টি করে জীবনীশক্তির পতন ঘটানোর চেষ্টা করে। এ অবস্থায় জীবনীশক্তি যে কোনো স্রাবকারী নতুন পথের সৃষ্টি করে ওই প্রবল বিষ বা বিষবাষ্প বের করে যন্ত্রটিকে রক্ষা করার চেষ্টা করে।অর্শের কারণঃ১. পুরনো কোষ্ঠকাঠিন্য।২. লিভার সিরোসিস, যকৃতে অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চয় ও অত্যধিক মস্তিষ্কের কাজ।৩. মূত্রাশয়ের গোলযোগ, প্রোস্টেট ক্যান্সার, গর্ভাবস্থায় মহিলাদের জরায়ুতে চাপপড়লে।আকৃতি অনুযায়ী প্রকারভেদ :১. ছোলার মতো,২. আঙুরের মতো,৩. খেজুর গাছের শিকড়ের মতো,৪. রেশন গাছের গোটার মতো,৫. খেজুরের মতো,৬. ডুমুরের মতো।শিরা স্ফীতির ওপর প্রকারভেদ যথা :১. মলদ্বারের অভ্যন্তরে অর্শ : ১-২ ইঞ্চি ভেতরের দিকে শিরার স্ফীতি হয়ে বলির সৃষ্টি হয়। একে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।ক. প্রথমতঃ মলদ্বারের ভেতর থেকে ব্যথাহীন রক্তপাত হয়। কিন্তু অর্শের বলি মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসে না।খ. দ্বিতীয়তঃ বলি মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসে, তবে মলত্যাগের পর নিজেই ভেতরে চলে যায়।গ. তৃতীয়তঃ বলিগুলো বাইরে বের হয়ে আসে এবং হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে না দিলে বাইরেই থেকে যায়।২. মলদ্বারের বাইরে অর্শ : মলদ্বারের বাইরে বলির সৃষ্টি হয় এবং হাত দিয়ে তা অনুভব করা যায় এবং৩. মিশ্র অর্শ : এক্ষেত্রে মলদ্বারের ভেতরে এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই অর্শের বলিপাওয়া যায়।লক্ষণসমূহ :১. পায়খানা করার সময় অত্যধিক বা অল্প পরিমাণে রক্ত যেতে পারে।২. গুহ্য দ্বারে জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যায়।৩. টাটানি ও যন্ত্রণা।৪. কাঁটাবিদ্ধ অনুভূতি।৫. মাথা ধরা ও মাথা ভার বোধ।৬. উরুদেশ, বক্ষ, নাভির চারপাশে ব্যথা ও মলদ্বারে ভার বোধ।৭. কোমর ধরা ও কোষ্ঠবদ্ধতা।অর্শ রোগে আক্রান্তদের করণীয়ঃ১. নিয়মিত পায়খানা করা।২. পেটে হজম হতে চায় না এমন খাদ্য বর্জন করা।৩. চিকিৎসকের পরামর্শমতো বিশ্রাম নেয়া।৪. হাতুরে ডাক্তার বা কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা না করা।প্রতিরোধের উপায় :১. কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা।২. নিয়মিত ঘুমানো।৩. পরিমাণ মতো পানি পান করা।৪. অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা।৫. তরলও সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহণ।৬. অধিক মশলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করা।হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:হোমিওপ্যাথি রোগ নিরাময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও সদৃশ উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এটি উপসর্গও জটিলতা মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য অবস্থায় রোগীর ফিরে যাবার একমাত্র উপায়। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু অর্শ চিকিত্সা নয়, তার অন্তর্নিহিত কারণ ও স্বতন্ত্র প্রবণতা মোকাবেলায়ও সহায়তা করে। স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন এবং চিকিত্সার জন্য, রোগীকে একজন যোগ্যতাসম্পন্ন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
অপচিকিৎসার কুফলঃ
জীবনীশক্তি(Vital force) সৃষ্ট এ স্রাবকারী পথকে চিকিৎসা শাস্ত্রবিদরা অর্শ,ভগন্দর, পাইলস, গেজ ইত্যাদি নামে অভিহিত করেন এবং অভ্যন্তরীণ দোষের কথা চিন্তা না করে কেবল স্রাবের দ্বারটি রুদ্ধ করার উপায় বের করেছেন। কিন্তু এ রূপ চিকিৎসার ফলে অভ্যন্তরীণ দোষ সমূহ প্রবল হয়ে ওঠে এবং জীবনীশক্তি হীনবল হয়ে নানা রকম মারাত্মক ব্যধির সৃষ্টি করে। ফলে রোগীর মৃত্যু ঘনাইয়া আসে বা দুরারোগ্য কোনো ভীষণ ব্যধির সৃষ্টি হয়ে আজীবন দুঃখ ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *