স্বামী স্ত্রী যৌন সম্পর্ক বা সহবাসের ক্ষেত্রে !! রমজান মাসে করনীয় (কুরআন হাদিসের আলোকে)।

প্রশ্নঃ এই ৩০ রোজার মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সহবাস করার নিয়ম কি?

রমজান হলো সংযমের মাস। রমজান মাসে স্ত্রী সহবাস নিয়ে ইসলামী বিধান। রোজায় যে জিনিসগুলো থেকে বিরত থাকতে হয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে যৌন সম্পর্ক বা সহবাস। কেউ যদি রোজা থাকা অবস্থায় এই কাজটি করে বসে তবে তার রোজা হবে না।
এর প্রমাণ হচ্ছে সূরা বাকারাতে আল্লাহ্‌র বক্তব্যঃ “রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে”। [আল-বাকারাঃ ১৮৭] এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে রোজার দিনে সহবাস হালাল করা হয়নি।
কোনো স্বামী যদি জোর করে স্ত্রীর সাথে যৌনসম্পর্ক করেন সেক্ষেত্রে স্বামীর রোজা ভেঙ্গে গেলেও স্ত্রীর রোজা ভাঙবে না। এর কারণ আমরা আগে উল্লেখ করেছি।
আল্লাহর রাসূল (সা.) ইবন ‘আব্বাস বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ আমার উম্মতের ওপর থেকে ত্রুটিবিচ্যুতি, ভুলে যাওয়া ও জোর করিয়ে করানো কাজকে মার্জনা করেছেন”। [প্রসঙ্গত আজকাল যেহেতু খবর পাওয়া যাচ্ছে নারীরা জোর করে পুরুষদের বিয়ে করছেন, ভবিষ্যতে পুরুষদের জন্য অনুরূপ ফিকহি আলোচনা করতে হতে পারে।
যৌন সম্পর্ক বলতে শরীআতের ভাষায় বোঝানো হচ্ছে পুরুষাঙ্গের (penis) সাথে স্ত্রী-অঙ্গের (vagina) মিলন। এক্ষেত্রে বীর্যপাত শর্ত নয়। অর্থাৎ এই দুই অঙ্গ সংস্পর্শে আসলেই রোজা ভেঙ্গে যাবে, বীর্যপাতের ঘটনা না ঘটলেও।
শায়খ সালেহ ইবন আল-‘উসায়মীন এই মতটিই ব্যক্ত করেছেন। যৌন মিলনের দ্বারা কেউ রোজা ভাঙলে সেই রোজা পরবর্তীতে কাযা করতে হবে এবং “ভারী কাফ্ফারা” দিতে হবে। সেই প্রসঙ্গ পরে আসছে।
শারীরিক স্পর্শ বা চুম্বন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কামনাবসত শারীরিক স্পর্শ যেমন fondling বা foreplay অথবা স্রেফ চুমুর কারণে রোজা ভাঙবে না। তবে এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তাই রোজার সময় এগুলো পরিহার করাই উত্তম। চুম্বন যদি কামনাবশত না হয় সেক্ষেত্রে ক্ষতি নেই।
স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বীর্যপাত ঘটানো যদি কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজের বীর্যপাত (ejaculation) ঘটান সেক্ষেত্রে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। যেমন নিজে হস্তমৈথুনের (masturbation) মাধ্যমে অথবা স্ত্রী কর্তৃক হস্তমৈথুনের মাধ্যমে যদি বীর্যপাত ঘটে তাহলে রোজা ভাঙবে।
কোনো ব্যক্তি যদি যৌনউত্তেজক কোনো কিছু দেখে, শোনে বা পড়ে – এক্ষেত্রে বীর্যপাত ঘটলে তার রোজা ভাঙবে। এক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে করা কোনো কাজের ফলে বীর্যপাত ঘটলে রোজা ভাঙবে।
এভাবে রোজা ভেঙ্গে গেলে কাযা করাই যথেষ্ট, যৌনমিলনের ক্ষেত্রে যে ভারী কাফ্‌ফারা দিতে হয় সেটি দিতে হবে না। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ঘটানো বীর্যপাতের ফলে যে রোজা ভাঙবে তার প্রমাণ হচ্ছে হাদীস কুদসীতে

আল্লাহ বলছেনঃ “সে (বান্দা) আমার জন্যই খাদ্য, পানীয় ও কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে”।
[বুখারী] যুক্তিসংগত কারণেই যে ব্যক্তি নিজে উদ্যোগ নিয়ে বীর্যপাত ঘটায় সে কামনা-বাসনা বা “শাহওয়াহ” পরিত্যাগ করল না। তবে বীর্যপাত যদি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে না হয় সেক্ষেত্রে রোজা ভাঙবে না।
যেমন স্বপ্নদোষের (wet dream) ফলে রোজা ভাঙবে না। কোনো ব্যক্তির চিন্তায় যদি আচমকা কোনো যৌন ভাবনা এসে উদয় হয় বা কোনো যৌন উত্তেজক চিন্তা চলে আসে যা সে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মাথায় আনেনি এবং এর ফলে যদি বীর্যপাত ঘটে সেক্ষেত্রে রোজা ভাঙবে না।
মাযী ও মানীর মাঝে পৃথকীকরণ বীর্যপাত প্রসঙ্গে আমাদের দুটি তরলকে আলাদা করতে হবে। এদের একটি হচ্ছে মাযী (المذي)। মাযী হচ্ছে যেটিকে ইংরেজিতে বলা হয় pre-seminal fluid। এটি একটি স্বচ্ছ পিচ্ছিল পদার্থ যা চূড়ান্ত বীর্যপাতের আগে নিঃসরিত হয় ফোঁটায় ফোঁটায়।
মাযী নিঃসরণের ফলে রোজা ভাঙে না (যদি না সেটা যৌনমিলনের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে, যেক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গের সাথে যোনির মিলনই যথেষ্ট রোজা ভাঙার জন্য)। শুধু মাযী নিঃসরণের ফলে যেহেতু রোজা ভাঙে না, কাযারও প্রশ্ন আসছে না। যদিও ইমাম মালেকের একটি বর্ণনা অনুযায়ী তিনি মাযী নিঃসরণকে রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে দেখেছেন, কিন্তু অধিকাংশ ‘উলামা একে রোজা ভাঙার কারণ হিসেবে দেখেন না।
মানী হচ্ছে যাকে ইংরেজিতে বলা হয় semen বা বাংলায় বীর্য। মানী বের হয়ে আসে চূড়ান্ত বীর্যপাতের সময় দফায় দফায়। এটির সাদা থিকথিকে একটি পদার্থ। মানী বের হলেই কেবল রোজা ভাঙবে উপরেল্লিখিত কারণগুলোতে। এ ব্যাপারে কোনো ইখতিলাফ নেই।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *