সন্তানের ওপর তার পিতা মাতার রক্তের প্রভাব রয়েছে – জানেন কি ?

মায়ের রক্তের গ্রুপ এবং তাঁর সন্তানের রক্তের গ্রুপ দুটোর সমীকরণের ফলাফল গর্ভস্থ ভ্রূণ বা নবজাতকের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ধরা যাক, গর্ভধারিণী মায়ের রক্তের গ্রুপ আরএইচ নেগেটিভ এবং তাঁর স্বামীর রক্তের গ্রুপ আরএইচ পজেটিভ। এই যোগসূত্রে আরএইচ পজেটিভ শিশুর জন্ম হতে পারে। এই মা যদি আগে থেকে আরএইচ রক্তকোষ দ্বারা সংবেদনশীল থাকেন, তাহলে গর্ভস্থ আরএইচ পজেটিভ বাচ্চা আরএইচ হিমোলাইটিক অসুখে কোনো না কোনো মাত্রায় আক্রান্ত হবে। আর মা যদি ডেলিভারির পরে প্রতিক্রিয়ার আওতায় আসেন, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী সব আরএইচ পজেটিভ গর্ভস্থ শিশু ঝুঁকিতে থাকবে।
বর্তমানে প্রচুর পরিমানে থ্যালাসেমিয়া ( রক্তের গ্রুপের উপর নির্ভর করে না। রক্ত এ রোগের পজেটিভ এবং নেগেটিভ বাহক হিসাবে কাজ করে। তাই রক্ত পরিক্ষা করে নিন আপনি এর বাহক কিনা ),আরএইচ হিমোলাইটিক, হাইড্রপস ফিটালিস ইত্যাদি রোগ ধরা পড়ছে। যার প্রভাব শিশুদের উপর সবচেয়ে বেশি। আর এ রোগ গুলি আসে পিতা মাতার রক্তের গ্রুপ ভিত্তিক গরমিল থেকে। স্বামী এবং স্ত্রীর রক্ত (রক্তের গ্রুপের) উপর নির্ভর করে শিশুর সুস্থতা। আর এই গ্রুপের গরমিল হলেই আপনার শিশু ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই বিয়ের আগেই আপনারা সবাই নিজে এবং যাকে বিয়ে করে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনারা উপযুক্ত কিনা ? আরও সুবিধার জন্য নিচে একটা চার্ট দিয়ে দেয়া হল। যা দেখলে আপনারাই বুঝে যাবেন যে আপনার কোন রক্তের গ্রুপ আর আপনি কোন রক্তের গ্রুপের সঙ্গীকে বিয়ে করবেন। আর ও বিস্তারিত জানার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ঝুঁকির সম্ভাবনা :-
মায়ের পজেটিভ(+) ও নেগেটিভ (-) রক্তের গ্রুপের সঙ্গে বাবার পজেটিভ (+) ও নেগেটিভ (-) রক্তের গ্রুপের সম্পর্ক-ঝুঁকি।
মায়ের রক্তের গ্রুপ
বাবার রক্তের গ্রুপ
ঝুঁকি
এ+, বি+, ও+ বা এবি+
এ+, বি+, ও+ বা এবি+,এ-, বি-, ও- বা এবি-
ঝুঁকি নেই।
এ-, বি-, ও- বা এবি-
এ-, বি-, ও- বা এবি-
ঝুঁকি নেই।
এ-
এ+
১৬%
বি+
বাচ্চার রক্তে গ্রুপের ওপর নির্ভর করে ২-১৬% ঝুঁকি।
ও+
১৬%
এবি+
বাচ্চার রক্তে গ্রুপের ওপর নির্ভর করে ২-১৬% ঝুঁকি।
বি-
এ+
বাচ্চার রক্তে গ্রুপের ওপর নির্ভর করে ২-১৬% ঝুঁকি।
বি+
১৬%
ও+
১৬%
এবি+
বাচ্চার রক্তে গ্রুপের ওপর নির্ভর করে ২-১৬% ঝুঁকি।
ও-
এ+
বাচ্চার রক্তে গ্রুপের ওপর নির্ভর করে ২-১৬% ঝুঁকি।
বি+
বাচ্চার রক্তে গ্রুপের ওপর নির্ভর করে ২-১৬% ঝুঁকি।
ও+
১৬%
এবি+
২%
এবি-
এ+, বি+, ও+ বা এবি+
১৬%
আরএইচ ‘ডি’ রক্তের শ্রেণীর গরমিল :-
ভাগ্য ভালো, সব রক্তশ্রেণী দুর্যোগ তৈরি করে না। কিন্তু ‘ডি’ অ্যান্টিজেনের গরমিলের চিত্র খুব ভয়াবহ হতে পারে।
  • তবে মাতা-পিতা দুজনই যদি ‘ডি’ নেগেটিভ হন, বাচ্চা কখনো ‘ডি’ পজেটিভ হবে না। সুতরাং বিপদমুক্ত।
  • কিন্তু ‘ডি’ নেগেটিভ মায়ের সঙ্গে ‘ডি’ পজেটিভ স্বামীর যোগসূত্রে বাচ্চা ‘ডি’ পজেটিভ, ‘ডি’ নেগেটিভ দুটোর যেকোনো একটা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘ডি’ পজেটিভ বেবি হলেই কেবল বিপদ।
  • গর্ভস্থ ভ্রূণ ‘ডি’ পজেটিভ হলেও প্রথম বাচ্চা এতে আক্রান্ত হয় না। প্রথম বাচ্চা জন্মদানের সময় আরএইচ পজেটিভ রক্তকোষজাত অ্যান্টিডি-অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে, যা পরবর্তী সময়ে গর্ভস্থ শিশু থেকে বা রক্ত সরবরাহতন্ত্রে প্রাপ্ত যেকোনো ‘ডি’ পজেটিভ রক্তকোষ পেলে সমূহ সংহারে উদ্যোগী হয়। এভাবে আরএইচ নেগেটিভ মা তাঁর ডি-অ্যান্টিজেন নিয়ে কতটা সংবেদনশীল হয়েছেন, তার মাত্রা মায়ের গর্ভকালীন সিরাম ইনভাইরেক্ট কুম্বসটেস্ট দ্বারা নির্ণয় করা যায়। প্রতিক্রিয়ার মাত্রা যত বেশি হবে, গর্ভস্থ ভ্রূণ তত বেশি ক্ষতির শিকার হবে; যার সর্বাধিক নমুনা হচ্ছে ‘হাইড্রপস ফিটালিস’।
সাবধানতা :-
  • বিয়ের আগে সবার (বর/কনে) রক্তের গ্রুপ টেস্ট করে নেওয়া দরকার যাতে পরবর্তীতের বড় ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • আপনি যদি থ্যালাসেমিয়া বাহক হন তাহলে এ বাহক যেন আপনার বউ এর না হয় সেই ভাবে বিয়ের প্রস্তুতি গ্রহন করুন।( এখানে আপনাকে রক্ত পরিক্ষা করতে হবে যে আপনি বাহক কিনা বা আপনার যে বউ হবে সে বাহক কিনা। এখানে রক্তের গ্রুপ পরিক্ষা করার প্রয়োজন নেই)
  • পরিকল্পিত পরিবার গড়ার জন্য সবসময় সচেতন থাকুন এবং বিশিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন।
  • রক্ত গ্রহনের সময় বহনকারী রক্ত ভাল করে পরীক্ষা করে নিন।
  • একি সিরিঞ্জ বার বার ব্যবহার করবেন না। অন্যের সিরিঞ্জ নিজে ব্যবহার করবেন না।
  • আপনার জন্য যেন আপনার সন্তান পরবর্তীতে বিপদে না পড়ে সেই জন্য আগের প্রস্তুতি গ্রহন করুন।
  • আরও বিস্তারিত জানার জন্য একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্রতিরোধ :-
  • সবাই অবগত আছেন থ্যালাসেমিয়া সন্তান জন্মদান প্রতিরোধে বিবাহপূর্ব রক্ত পরীক্ষা করিয়ে বর বা কনে উভয়ে এ রোগের বাহক কি না জেনে নিয়ে চিকিৎসার আশ্রয় নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রেও গর্ভপূর্ব হতে মা ও বাবার রক্তশ্রেণী জানা গেলে মা, বাবা ও অনাগত সন্তানের রক্তশ্রেণীর গরমিলজনিত সংকট মোকাবিলায় প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ।
  • সব আরএইচ নেগেটিভ মাকে গর্ভকালীন ২৮ ও ৩৪ সপ্তাহে, প্রসব-পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে, গর্ভপূর্ব সময়ে গর্ভপাত, জরায়ু থেকে রক্তপাত হয়ে থাকলে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ‘অ্যান্টিডি ইমিউনোগ্লোবুলিন’ দেওয়ার মাধ্যমে ভয়ানক এ অসুখ থেকে অনাগত সন্তানকে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *