জন্মের পর শিশুরা যে রোগগুলিতে বেশি বেশি আক্রান্ত হয়

প্রায়ই দেখে থাকবেন জন্মের পরপরই নবজাতকের বেশ কিছু অসুখ বেশি বেশি হয়ে থাকে। ছোট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে কিছু অসুখে তারা বেশি আক্রান্ত হয়। এ ধরনের অনেক অসুখ অল্প যত্নে ভালো হয়ে যায়। নবজাতকের এরকম কয়েকটি রোগ নিয়ে আলোকপাত করেছেন অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন।
চোখ দিয়ে পানি পড়া :-
কোনো কোনো নবজাতকের চোখ দিয়ে পরিষ্কার পানি বা অশ্রু ঝরে পড়তে পারে। তার জন্য কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন নেই। তবে শিশুর নাকের গোড়ায় চোখের কোনা বরাবর আঙুল দিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ বা মালিশ করলে চোখ দিয়ে পানি পড়া সেরে যায়। চোখের পানি যদি পুঁজ মেশানো হয় বা পুঁজের মতো হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
জন্ডিস :-
জন্মের পর অনেক শিশুর জন্ডিস দেখা দিতে পারে। এটা খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত নবজাতকের জন্মের দুই দিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে এই জন্ডিস দেখা দিতে পারে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে তা সেরে যায়। এই সময় মায়ের দুধ শিশুকে বেশি করে খাওয়াতে হয় এবং সেই সঙ্গে সকালের হালকা রোদে শিশুকে খালি গায়ে কিছুক্ষণ রাখতে হয়। তাহলে শিশু দ্রুত জন্ডিসমুক্ত হয়। তবে মনে রাখতে হবে – শিশুর মাথায় যেন সূর্যের আলো সরাসরি না পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুর জন্ডিসে আলাদা কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন নেই। তবে শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই যদি জন্ডিস দেখা দেয় অথবা সাত দিন বয়সের পর জন্ডিস দেখা দেয় বা জন্ডিসের কারণে গায়ের হলদেটে ভাব যদি দিন দিন গাঢ় হতে থাকে, তবে ডাক্তার দেখাতে হবে।
স্তন ফুলে যাওয়া :-
জন্মের পর অনেক শিশুর (ছেলে বা মেয়ে) স্তন ফুলে যায় এবং মেয়েসন্তানের যোনিপথ দিয়ে রক্ত মিশ্রিত স্রাব বের হতে পারে। এটা স্বাভাবিক এবং এর জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।
ফুসকুড়ি :-
অনেকেই শিশুকে জন্মের পর গরম কাপড়, ভারী তোয়ালে ইত্যাদি দিয়ে পেঁচিয়ে রাখে। অতিরিক্ত কাপড় পরানোর ফলে গরমে শিশুর গায়ে লাল দানা বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। এ রকম হলে শিশুকে ঘন ঘন কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। গায়ে বেবি পাউডারও মাখা যেতে পারে। শিশুকে অতিরিক্ত কাপড় বাদ দিয়ে হালকা পাতলা আরামদায়ক কাপড় পরাতে হবে।
যোনিপথে রক্তক্ষরণ :-
অনেক সময় নবজাতক মেয়েদের যোনিপথে রক্তক্ষরণ হতে পারে। সাধারণত চার দিন থেকে ১০ দিনের মাথায় রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং তা মায়েদের হরমোনের প্রভাবে হয়। রক্তক্ষরণের অন্যান্য কারণ যদি না থাকে, এই রক্তক্ষরণ নিজেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। এ ধরনের রক্তপাতে সাধারণত ভয়ের কিছু নেই। তবুও এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
কনজাংটিভাইটিস :-
শিশুদের চোখের সাদা অংশ বা কনজাংটিভায় ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। এ রোগে শিশুর চোখে পিঁচুটি বা পুঁজ দেখা যায় এবং চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। কনজাংটিভাইটিস হলে চোখ বারবার পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হয় অথবা নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়। অনেক সময় এই প্রদাহ শিশুর অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
নাভি স্ফীতি :-
কোনো কোনো শিশুর নাভি শুকিয়ে যাওয়ার পর নাভিমুখের নিচের মাংসপেশিতে ফাঁকের সৃষ্টি হয় এবং শিশু কাঁদলে বা কোঁত দিলে নাভি বেলুনের মতো ফুলে ওঠে। প্রথম কয়েক মাসে ফোলা বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে পরে ফোলা সংকুচিত হতে হতে স্বাভাবিক হয়ে যায়। নাভি স্ফীতি কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে নাভি স্ফীতি খুব অস্বাভাবিক মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *