মেয়েদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

অনিয়মিত মাসিক, মুখমণ্ডলে অবাঞ্ছিত লোম, অ্যাকনে এবং বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হল পলিসিস্টিক ওভারি ৷ তাই অনিয়মিত মাসিক নিয়ে মেয়েদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই৷ মেয়েদের হরমোনাল সমস্যার মধ্যে ৫-১০ % হলো এই পলিসিস্টিক ওভারি ৷ এই রোগটি যখন অনেক গুলো উপসর্গ নিয়ে দেখা দেয় তখন একে বলা হয় পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম ৷ সংক্ষেপে PCOS ৷
অধিকাংশ মহিলাদের জরায়ুতেই ধরা পড়ছে একাধিক সিস্ট। যদিও এখনও এর প্রকৃত কারণ জানাতে পারেননি চিকিত্সকরা । অনেকেই মনে করেন জরায়ুর সিস্ট বংশগত ব্যাপার। প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ টিনএজারদের মধ্যে জরায়ুতে একাধিক সিস্টের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যার দুটি সব থেকে বড় ফল বন্ধ্যাত্ব ও অতিরিক্ত মেদবহুল শরীর। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ মহিলাদের মধ্যে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার প্রবণতা দেখা গেছে। যার থেকে ডায়বেটিস, রক্তে উচ্চ কলেস্টেরল মাত্রা ও জরায়ুর ক্যানসারের মত অসুখেও আক্রান্ত হচ্ছেন মহিলারা।
সমীক্ষা বলছে সারা বিশ্বের ৪ থেকে ১১ শতাংশ মহিলাদের মধ্যে জরায়ুতে সিস্টের প্রবণতা পাওয়া গেছে। যদিও গ্রামের দিকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম, প্রায় ৩০ শতাংশ শহুরে মহিলা এই অসুখে আক্রান্ত। চলুন জেনে নেয়া যাক কারা এই রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন , রোগটির লক্ষণ কী এবং কোথায় গেলে সুচিকিত্সা পাব ৷
পলিসিস্টিক ওভারি কী ?
নাম থেকে আমরা বুঝতে পারি এটা ওভারি বা ডিম্বাশয়ের রোগ ৷ এই রোগে ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয় ৷ তবে সবক্ষেত্রেই যে এমনটি হবে তা নয় ৷ এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ক্লিনিক্যাল ডায়াগনসিস করে থাকেন ৷
রোগের লক্ষণ সমূহ :-
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি হওয়া।
  • ঘামে দুর্গন্ধ।
  • পুরুষদের মতো কিছু শারীরিক সমস্যা, যেমন অস্বাভাবিক হেয়ার গ্রোথ।
  • ঘাড়ের কাছে কালো চওড়া দাগ।
  • পিরিয়ড অনিয়মিত। অনেক দিন পরপর পিরিয়ড হওয়া। সেই সময় খুব বেশি রক্তক্ষরণ অথবা অল্প রক্ত যাওয়া।
  • খুব বেশি পিম্পল।
  • অতি উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা
  • চুল পড়া। অনেক ক্ষেত্রে টাক পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। প্রতিরোধে যতটা সম্ভব ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা। বেশি তেল, মসলা ছাড়া হালকা খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম খাবার গ্রহণ করা।
এছাড়াও অতিরিক্ত ওজনের কারণে রোগী ডায়াবেটিস , হাইপারটেনশন এবং রক্তে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরলজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসতে পারে ৷
কাদের হয় :-
নারীদের রিপ্রোডাকটিভ এইজ বা প্রজননক্ষম বয়সে রোগটি হয় ৷ সাধারণত ১৫-৪৫ বছর বয়সে রোগটি বেশি হয় ৷
কেন হয়ে থাকে ?
এই রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও , ধারনা করা হয় হরমনের ভারসাম্যহীনতা এবং বংশগতি অন্যতম কারণ ৷ যেই পরিবারের কোনো সদস্যদের বিশেষ করে মা বা বোনের এই রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কিছুটা বেশি ৷মেয়েদের শরীরে অতিরিক্ত এন্ড্রজেন ( পুরুষ হরমোন ) তৈরি হওয়া কেও এই রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয় ৷
প্রয়োজনীয় টেস্টসমূহ :-
যেহেতু টেস্ট গুলোর বাংলা নাম কখনই ব্যবহার করা হয়না , তাই এইক্ষেত্রেও সেই নিয়ম অনুসরণ করা হলো।
  • Fasting glucose test
  • Thyroid function test
  • Lipid level
  • Ultrasonogram
  • Serum testosteron level
  • Serum FSH / LH
এই রোগের কারণে কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে :-
  • ডায়াবেটিস
  • উচ্চ-রক্তচাপ
  • রক্তে উচ্চ-মাত্রায় কোলেস্টেরল
  • Endometrial carcinoma ( এক রকম জরায়ু ক্যান্সার )
  • হার্ট এ্যাটাক
  • স্লিপ এপ্নিয়া ( ঘুমের ভিতর নিশ্বাস আটকে যাওয়া )
  • অতি উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা
  • ব্রেস্ট ক্যান্সার ( স্তন ক্যান্সার )
গর্ভকালীন অতিরিক্ত সতর্কতা :-
PCOS এর রোগীর ক্ষেত্রে মিসক্যারিজ ,মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান প্রসবের মত জটিলতা দেখা দিতে পারে। আপনি যদি পলিসিস্টিক ওভারির রোগী হন , তবে গর্ভধারণকালীন সময়ে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ৷ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন এবং চেকআপ করাবেন ৷
রোগের চিকিৎসা :-
পলিসিস্টিক ওভারির প্রপার হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা রয়েছে। অভিজ্ঞ একজন হোমিওপ্যাথের সাথে যোগাযোগ করুন এবং চিকিত্সা নিন, চির দিনের জন্য এটি নির্মূল হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ তাও আবার কোনো প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই। সুস্বাস্থ্য ও শুভকামনা রইলো সবার প্রতি ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *