বিবাহিত পুরুষদের যৌন দুর্বলতায় আদৌ কি ঔষধের প্রয়োজন আছে ?

আমাদের দেশের কিছু হারবাল প্রতিষ্ঠান তরুণ-যুবকদের দুর্বল মানুসিকতার সুযোগ নিয়ে নানা কৌশলে বিজ্ঞাপনের ছটায় বিভ্রান্ত করে তাদের যৌন রোগী বানিয়ে তুলছে। ক্যাবল নেটওয়ার্কদের বাণিজ্যিক ভিডিও চ্যানেলের মাধ্যমেও ভুঁইফোড় কথিত নামসর্বস্ব হারবাল মেডিক্যালগুলোর অশ্লীল চটকদার বিজ্ঞাপনে যে কোন ভদ্র রুচিশীল দর্শকও এখন অতিষ্ঠ। অথচ বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা পর্যন্ত বলছেন যৌন উত্তেজক এই হারবাল ঔষধগুলি একসময় পুরুষদের যৌন ক্ষমতায় অক্ষম করে তুলে। দেখুন এ সম্পর্কে দেশের খ্যাতনামা একজন চিকিৎসক কি বলছেন ? এরকম আরো অনেক মতামত পেয়ে যাবেন অনলাইন সার্চ করে।
আরেকটি কথা জেনে রাখবেন আমি সব হারবাল ঔষধেরই দোষ দিচ্ছি না। এখানে শুধু যৌন উত্তেজক ক্ষতিকর ঔষধের কথা বলা হচ্ছে যে গুলো তরুণ যুবকরা চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়াই বিজ্ঞাপনের ছটায় বিভ্রান্ত হয়ে বা শখের বসে কিনে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর ক্ষনিকের আনন্দ লাভ করতে গিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছে। অথচ এগুলো খাওয়ার কোনো যৌক্তিকতাই নেই।

এখন কথা হলো বিবাহিত পুরুষদের যৌন দুর্বলতায় আদৌ কি কোনো ঔষধের প্রয়োজন আছে ? এক কথায় উত্তর হলো : ” না “

স্বাভাবিক অবস্থায় যৌন দুর্বলতায় কোনো প্রকার ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নাই। অর্থাৎ লিঙ্গ উত্থান জনিত কোনো শারীরিক সমস্যা অথবা অন্য কোনো যৌন রোগের কারণে যদি আপনার যৌন দুর্বলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে সেই রোগের চিকিত্সা করাতে হবে। তারপর যৌন সমস্যার বিষয়টি দেখতে হবে। মূল কথা হলো বিবাহিত পুরুষদের যৌন দুর্বলতায় কোনো ঔষধের প্রয়োজন নাই। আপনারা হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে যৌন দুর্বলতার সৃষ্টি হলে এটা সারবে কিভাবে ? একটা বিষয় চিন্তা করুন পুরুষের যৌন ক্ষমতাটা তার ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে না। এটা সরাসরি নির্ভর করে তার শারীরিক সক্ষমতার উপর। তাই আপনাকে চিন্তা করতে হবে কি করলে আপনি সবসময় শারীরিক ভাবে ফিট থাকবেন। কারণ যৌনতাও আপনার শরীরেরই একটা অংশ। তাই নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আপনি যৌনতায় ফিট থাকতে পারেন। তার জন্য ক্ষতিকর হার্বাল ঔষধের প্রয়োজন নেই।
আপনি যদি সখের বসে নিয়মিত এইসব ক্ষতিকর হার্বাল বা কবিরাজি ঔষধ খেতে থাকেন তা হলে একসময় দেখবেন আপনি এতে অব্ভস্থ হয়ে পড়েছেন আর এমনটিই হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং প্রতিবার ঐসব ঔষধ খাওয়া ব্যতীত আপনি আর সহবাস করতে পারছেন না। শুধু তাই নয় আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহও নানা প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে থাকবে। আর সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি আমরা দেখে আসছি সেটা হলো ঐ অবস্থায় আর কোনো যৌন শক্তির ঔষধই কাজ করে না। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কি ঐসব ক্ষতিকর হার্বাল ঔষধ খেয়ে আপনার যৌন জীবন বিপর্যস্থ করে তুলবেন নাকি নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপনের মাধ্যমে আনন্দময় সুখী যৌন জীবন উপভোগ করবেন। তবে ক্ষেত্র বিশেষে হয়ত চিকিত্সকরা ঐ সংক্রান্ত ঔষধ কিছু দিনের জন্য প্রেস্ক্রাইব করতে পারেন। সেটা ভিন্ন কথা। কারণ যে কোনো ঔষধই চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া বিপদজনক। এবার আসুন বিবাহিত পুরুষদের যৌন দুর্বলতায় কি কি করা প্রয়োজন সে দিকে যাই।
বিবাহিত জীবনে পুরুষদের যৌন দুর্বলতা একেবারেই একটা সাধারণ ব্যাপার । আপনি যদি এবিষয়ে একটু সচেতন থাকেন তাহলে এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। আপাতত আজকে কিছু খাবার-দাবার সম্পর্কে বলব যে গুলো আপনার খাবার মেনুতে নিয়মিত রাখলে যৌন দুর্বলতার প্রশ্নই উঠবে না। তবে আপনার যদি অন্য আরো কোনো শারীরিক সমস্যা থেকে থাকে যার জন্য আপনি যৌন সমস্যায় ভুগছেন তাহলে অবশ্যই আপনার হোমিওপ্যাথের সাথে কথা বলে চিকিত্সা নিবেন। দেখবেন কিছু দিনের হোমিও চিকিত্সাতেই আপনি সেরে উঠেছেন তার জন্য সব সময় ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। বিবাহিত জীবনে যৌনতায় সব সময় ফিট থাকতে নিচের খাদ্যগুলি নিয়মিত গ্রহণ করুন।
ডিম :- খাদ্য হিসাবে ডিম আপনার যৌন সামর্থ্য বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ডিমে প্রচুর পরিমাণে বি-ফাইভ, বি-সিক্স থাকে। বি-ফাইভ এবং বি-সিক্স হরমোন লেভেলের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং ক্লান্তি দূর করে। তাই প্রতিদিন ডিম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
দুধ :- দুধ হলো অসাধারণ একটি যৌন শক্তি বর্ধক খাদ্য। বিশেষ করে ছাগলের দুধ পুরুষদের দ্রুত যৌনশক্তি যোগায়। এতে রয়েছে বেশি পরিমাণ প্রাণিজ-ফ্যাট যা একটি প্রাকৃতিক খাদ্য এবং পুরুষদের যৌনজীবনের উন্নতি ঘটিয়ে থাকে। আপনি যদি শরীরে সেক্স হরমোন তৈরি হওয়ার পরিমাণ বাড়াতে চান তাহলে নিয়মিত দুধ পান করুন।
মধুঃ- এর গুনের কথা মনে হয় আমার চেয়ে আপনারাই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়্সাল্লামের নিকট মধু এই জন্য বেশী প্রিয় ছিল যে, আল্লাহ তা’আলা বলেন, এর মধ্যে মানব জাতির রোগ নিরাময় রয়েছে। সকালে খালি পেটে জিহ্বা দ্বারা মধু চেটে খেলে কফ দূর হয়, দেহের অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ বের হয়, পাকস্থলী পরিস্কার হয় এবং স্বাভাবিক হয়ে যায়, মস্তিস্ক শক্তি লাভ করে, পুরুষের যৌন শক্তির বৃদ্ধি হয়, মূত্রথলির পাথর দূর করে, প্রস্রাব স্বাভাবিক হয় এবং ক্ষুধা বাড়ায়। অর্থাৎ আপনাকে শারীরিক ভাবে এবং যৌনতায় ফিট রাখতে মধুর রয়েছে জাদুকরী ভুমিকা। মধু এবং দুধ হাজারো রকম ফুল ও দানার নির্যাস। দুনিয়ার সকল গবেষকরা একত্র হয়ে এমন নির্যাস প্রস্তুত করতে চাইলেও কখনো পারবে না। এটা শুধু মহান আল্লাহ পাকেরই শান যে, তিনি বান্দার জন্য এমন উত্তম ও বিশেষ উপকারী নির্যাস পয়দা করে দিয়েছেন।
কলিজা :- পুরুষের যৌন জীবনে খাদ্য হিসেবে কলিজারও অনেক প্রভাব রয়েছে। কারণ, কলিজায় প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। আর এই জিঙ্ক শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেশি পরিমাণে রাখে। যথেষ্ট পরিমাণ জিঙ্ক শরীরে না থাকলে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় না। পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে যে হরমোন নিঃসৃত হয় তা টেস্টোস্টেরন তৈরি হওয়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া জিঙ্ক এর কারণে আরোমেটেস এনজাইম নিঃসৃত হয়। এই এনজাইমটি অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরোনকে এস্ট্রোজেনে পরিণত হতে সাহায্য করে। এস্ট্রোজেনও আপনার যৌনতার জন্য প্রয়োজনীয় একটি হরমোন। তাই মাঝে মাঝে কলিজা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
জয়ফল :- জয়ফল থেকে এক ধরনের কামোদ্দীপক যৌগ নিঃসৃত হয়। সাধারণভাবে এই যৌগটি স্নায়ুর কোষ উদ্দীপিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলে পুরুষের যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। কফির সাথে মিশিয়েও আপনি জয়ফল খেতে পারেন, বলে রাখা প্রয়োজন পুরুষের যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে কফির ভালো ভুমিকা রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে দুইটির কাজ একত্রে পাওয়া সম্ভব।
রসুন :- রসুন নিস্তেজ লোকদের মধ্যে যৌন ক্ষমতা সৃষ্টি করে, বীর্য বৃদ্ধি করে, গরম স্বভাব লোকদের বীর্য গাঢ় করে, পাকস্থলী ও গ্রন্থির ব্যাথার উপকার সাধন এ্যাজমা এবং কাঁপুনি রোগেও উপকার সাধন করে। এই রসুনকে আবে হায়াত বলেও আখ্যা দেয়া হয়। অন্যান্য উপকারের সাথে সাথে রসুন পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে অসাধারণ ভুমিকা পালন করে। তাই দৈনিক অন্তত ২/৩ কোয়া রসুন অন্তর্ভক্ত করুন।
চীনা বাদাম :- চীনা বাদামে প্রচুর জিঙ্ক থাকে। এই জিঙ্ক শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ায় এবং শক্তিশালী শুক্রাণু তৈরি করে। জিঙ্ক কম থাকলে শরীরে শতকরা ৩০% কম বীর্য তৈরি হয়। যারা খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে কম জিঙ্ক গ্রহণ করে তাদের বীর্য এবং টেস্টোস্টেরনের ঘনত্ব দুটিই কমে যায়। তাই মাঝে মাঝে চীনা বাদাম খেতে চেষ্টা করুন।
কলা :- কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ব্রুমাইল্ড এনজাইম। এইসব উপাদান পুরুষদের যৌন আসক্তি বাড়াতে দারুন কার্যকরী। তাই কলাকেও বাদ রাখবেন না।
উপরে যতগুলো খাদ্যের কথা বলা হয়েছে তাদের সবগুলিই হলো প্রাকৃতিক অর্থাৎ এই গুলো গ্রহণে কোন প্রকার ক্ষতির অবকাশ নেই। আপনি যদি সবগুলো গ্রহণ করতে না পারেন অন্তত দুধ, ডিম এবং মধু গ্রহণ করুন নিয়মিত। তাতেও আপনি যৌন দুর্বলতায় ভুগবেন না। কিন্তু ভুল করেও শখের বসে রাস্তাঘাট থেকে যৌন উত্তেজক কোনো প্রকার হার্বাল ঔষধ কিনে খাবেন না। প্রয়োজনবোধে যেকোনো যৌন সমস্যায় আপনার হোমিওপ্যাথের সাথে পরামর্শ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *