ঘামজনিত সমস্যার মধ্যে প্রধানত দুটো সমস্যার সমাধান

আমরা দৈনন্দিন জীবনে সবার সাথে চলাফেরা করতে গিয়ে ঘামজনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান হওয়ায় এবং বাতাসে আর্দ্রতা অত্যধিক বেশি থাকায় গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীর থেকে যে ঘাম নির্গত হয় তা সহজে শুকোতে চায় না এবং শরীরে বেশ আঠালোভাবের সৃষ্টি হয়; কিন্তু এত গেল প্রাকৃতিক ও সহজাত প্রক্রিয়ার কথা। এ ছাড়া কিছু কিছু লোকের অত্যধিক ঘামের প্রবণতা রয়েছে।

ঘামজনিত সমস্যার মধ্যে প্রধানত দুটো সমস্যাই প্রধান:
১) অত্যধিক ঘাম
২) দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম।

অত্যাধিক ঘাম : ইংরেজিতে একে হাইপার হাইড্রেসিস বলা হয়ে থাকে। এটি দুই প্রকারের হতে পারে। যেমন শরীরের কিছুু কিছু অংশে যথা- হাত ও পায়ের তালু, বগল, দুই ঊরুর মধ্যকার অংশে ও পেছনে মলদ্বারের আশপাশের জায়গায়। তা ছাড়া নাকের অগ্রভাগে, কপালে ইত্যাদি জায়গায়ও হতে পারে। এ ধরনের স্থানীয় এলাকায় ঘামের প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে ইমোশন বা আবেগপ্রবণতা ও মানসিক চাপ। এ ছাড়া কিছু কিছু স্নায়ুতন্ত্রের রোগের কারণেও হতে পারে। কারণবিহীন Idiopathic Hyperhidrosis বা ইডিওপেথিক হাইপারহাইডোসিস, যা মানসিক অনুভূতির কারণে হয়ে থাকে। যেমন : দুশ্চিন্তা, টেনশন, ভয় ইত্যাদি এবং এটি শুধু হাত-পায়ের তালু ও বগলে দেখা যায়।

সব শরীরে ঘামের কারণ : খুব গরম ও অত্যধিক আর্দ্র পরিবেশে বেশি ঘাম হতে পারে। তা ছাড়া অত্যধিক ব্যায়াম বা পরিশ্রমের কারণেও হতে পারে। আর যেসব রোগের কারণে হতে পারে তার মধ্যে জ্বরজনিত রোগে বেশি হতে দেখা যায়। শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণেও হতে পারে। যেমন- ডায়াবেটিস, থাইরয়েড গ্লান্ডের অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ, গর্ভাবস্থা, বয়স্ক মহিলাদের মাসিক বন্ধের পরবর্তীপর্যায়ে। তা ছাড়া স্নায়ুতন্ত্রের নানারকম রোগ ও মস্তিষ্কের টিউমার এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদিতেও দেখা দিতে পারে। কারো কারো দেখা যায়, অত্যধিক ঝাল, আচার, টমেটো ইত্যাদি খেলেও সারা শরীরে অত্যধিক ঘাম হয়।

চিকিৎসা : কিছু কিছু ওষুধ আছে যা খেলে এই অতিরিক্ত ঘাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়; কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি থাকার কারণে এগুলোর ব্যবহার খুবই সীমাবদ্ধ। তবে কিছু কিছু ঘুম ও মানসিক প্রশান্তির ওষুধ কিছু কার্যকর ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ হচ্ছে স্থানীয়ভাবে লাগানোর জন্য ২০ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড হেক্সাহাইড্রেট। প্রতি রাতে শুকনো শরীরে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি এক বা দুই সপ্তাহ ব্যবহার করার পর ভালো হয়ে গেলে সপ্তাহে এক দিন কন্ট্রোল রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে কাজ না হলে সার্জিক্যালপ্রক্রিয়াও রয়েছে বা Iontophoresis বা পানিভর্তি একটি যন্ত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালিয়ে এই অসুবিধা দূর করা যায়।

দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম : আমাদের মধ্যে কারো কারো এই সমস্যার কারণে কখনো কখনো খুবই লজ্জাকর ও অসহনীয় অবস্থায় সম্মুখীন হতে হয়। এটি সাধারণত বগলে দেখা যায় বেশি। আমাদের শরীরে দুই ধরনের ঘর্ম সাধারণত জীবাণুুমুক্ত থাকে এবং দুর্গন্ধবিহীন; কিন্তু এই ঘামে এক ধরনের ঘাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়াযুক্ত হয়ে ফ্যাটি এসিড তৈরি করে এবং ঘামকে করে তোলে দুর্গন্ধযুক্ত।
অ্যাক্রাইন গ্রন্থি থেকে নিঃসরিত ঘর্ম যা কি না সাধারণত পায়ের পাতায়, ব্রেস্টের নিচে, দুই ঊরুর সন্ধিক্ষণে বা পেছনের লজ্জাস্থানে নিঃসরিত হয়। এখানে কিন্তু গ্রন্থির কোনো ভূমিকা থাকে না; কিন্তু ত্বক থেকে নির্গত কেরোটিন পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবের ফলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। তা ছাড়া বিভিন্ন পদার্থেরও প্রভাব রয়েছে, তার মধ্যে রসুন ও আর্সেনিক উল্লেখযোগ্য। এখন কথা হচ্ছে, দুর্গন্ধযুক্ত ঘামের কারণ যাই হোক না কেন এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? পরিত্রাণের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ঘামকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখা এবং সেটি সম্ভব হতে পারে।
১) বারবার আক্রান্ত এলাকা ভালোভাবে ধৌত করা এবং সম্ভব হলে জীবাণুনাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক সাবান ব্যবহার করা।
২) স্থানীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করা।
৩) বগলের লোম পরিষ্কার করা।
৪) অন্তর্বাস বা আন্তারওয়্যার নিয়মিত বদলানো।
৫) পায়ের তালুতে বা আঙুলের ফাঁকে যে দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হয়ে থাকে তার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা পাউডার ব্যবহার করা। তা ছাড়া পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট সলুশন প্রতিদিন আধঘণ্টা ব্যবহার করলেও কিছু দিনের মধ্যে পা দুর্গন্ধমুক্ত হবে। সর্বোপরি এ ব্যাপারে হোমিও চিকিৎসা পরামর্শ নিতে ভিজিট করুন


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *