কি ভাবে আপনার লিভারের যত্ন নিবেন ?

লিভার নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ নেই৷ তাকে ভালো রাখতে কত কী-ই যে করি৷ কিন্ত্ত তাকে কি সে সত্যিই ভালো থাকে! অঢেল মদ্যপানের সঙ্গে লিভার ভালো রাখার ওষুধ খেয়ে চলা মানুষের সংখ্যা প্রচুর৷ মাঝ বয়সের পর তো বিশেষ করে৷ উদ্দেশ্য, মদ্যপানজনীত লিভার ড্যামেজকে সামলে রাখা৷ কিন্ত্ত সত্যিই কি সে সামলে থাকে? বিজ্ঞানীদের মতে, থাকার স্বপক্ষে এখনও কোনও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নেই৷ বস্ত্তত, লিভার ভালো রাখার কোনও ওষুধই নেই৷ প্রশ্ন আসে, তাহলে এই যে বাজার ছেয়ে গিয়েছে লিভারের ওষুধে, তাদের তবে ভূমিকা কী? যাঁরা খাচ্ছেন, সবাই কি বোকা?

লিভার ভালো করার ওষুধ, প্ল্যাসিবো এফেক্ট :-
বিজ্ঞান যাই বলে বলুক, এই সব ওষুধের কিছু এফেক্ট হয় শরীরে, যাকে বলে প্ল্যাসিবো এফেক্ট৷ অর্থাত্‍, ভক্তিভরে চরণামৃত খেলে যে ফল হয়, তাই৷ বিশ্বাস বলে, আমি এতেই ভালো হবে সব৷ মনে শান্তি আসে৷ তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে শরীরে৷ আর কে না জানে, শরীর সুস্থ রাখতে, বিশেষ করে পেটের যে কোনও সমস্যায় মনের ভূমিকা অসীম৷
সরবিলিন ইত্যাদিরা..:-
এই ওষুধ বাওয়েল মুভ করতে সাহায্য করে৷ অ্যাকিউট হেপাটাইটিসে যখন শরীর আইঢাই, এই ওষুধে পেট পরিষ্কার হয়ে কষ্ট কমে৷ ল্যাকটুলোজ জাতীয় স্টুল সফটনার দিলেও এই একই কাজ হবে৷ কাজেই ওষুধের চক্করে সময় নষ্ট না করে, লিভার যাতে সত্যিই ভালো থাকে তার ব্যবস্থা করুন৷
মদ্যপানে বিরতি :-

যত মানুষ মদ্যপান করেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের লিভার খারাপ হয়৷ উল্টো দিকে, লিভার খারাপ হওয়া মানুষের মধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ জনের ক্ষেত্রেই কারণ মদ্যপান৷ এবার আপনিই ঠিক করুন কী করবেন৷ গলা অবধি খেয়েও কারও হয়তো কিছু হয় না, কিন্ত্ত আপনার যে দু-এক পেগেই হবে না, এমন গ্যারান্টি নেই৷ তাও যদি নেশা ছাড়তে না পারেন, বছরে এক-আধবার লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কিনা৷ তবে হ্যাঁ, মদ্যপানে ও আনুসঙ্গিকের যুগলবন্দিতে বা এমনিও ওজন যদি বেজায় বাড়িয়ে ফেলেন লিভারের হাত ধরে কিন্ত্ত আসতে পারে অন্য বিপদও৷
ওবেসিটি, লিভার ও অন্যান্য :-
ওজন খুব বেড়ে গেলে লিভারে ফ্যাট জমার প্রবল আশঙ্কা৷ অর্থাত্‍ যাকে ফ্যাটি লিভার বলে৷ ব্যাপারটা ভালো মোটেও নয়৷ তবে একেবারে হায় হায় করার মতোও কিছু নয়, অন্তত লিভারের দিক থেকে৷ কারণ হিসেব বলছে ব্যবস্থা না নিলে এই সব মানুষদের মধ্যে অধিকাংশই মারা যান স্ট্রো, হার্টঅ্যাটাক বা ক্যান্সারে৷ লিভার নষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার চান্স আসে এর পরে৷ কারণ, ফ্যাটি লিভারের তলায় লুকিয়ে থাকে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, ডায়াবিটিস, হাইকোলেস্টেরল-ট্রাইগ্লিসারাইড ও হাইপ্রেশাররের বীজ৷ যাদের একযোগে মেটাবলিক সিনড্রোম বলেয় সময়ে ব্যবস্থা না নিলে মহীরুহ হয়ে উঠতে যাদের বেশি সময় লাগে না৷
এক ঢিলে তিন পাখি :-
ওবেসিটি, ফ্যাটি লিভার ও মেটাবলিক সিনড্রোম, তিনের চাবিকাঠিই লুকিয়ে আছে লো-ক্যালোরির সুষম খাবার ও এক্সারসাইজের মধ্যে৷ দিনে ৩০-৪০ মিনিট ঘাম ঝড়ানো ব্যায়াম করলে, সঙ্গে ভাজা-মিষ্টি-ফাস্টফুড বর্জিত কম তেলে রান্না করা খাবার খেলে সব কটি সমস্যাই আয়ত্তে থাকে৷ দেখা গিয়েছে যাঁরা ওষুধ খেয়ে ফ্যাটি লিভারকে বশে রাখার চেষ্টা করুন তাঁদের চেয়ে যাঁরা ডায়েট-ব্যায়াম করেন, তাঁরা অনেক বেশি ভালো থাকেন৷
ওষুধ ও লিভার :-
প্রচুর ওষুধ আছে যা লিভারের ক্ষতি করে৷ ডাক্তারের পারমর্শ মতো খেলে তিনি লাভ-ক্ষতির বিচার করে ওষুধ দেন বলে সমস্যা কম হয়৷ সে জন্যই বলা হয় নিতান্ত প্রয়োজন না হলে ওষুধ না খেতে৷ কথায় কথায় ব্যথার ওষুধ, ভেষজ ওষুধ বা ওজন কমানোর সাপলিমেন্ট না খাওয়াই ভালো৷
লিভারে ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে :-
এর অন্যতম শর্ত হাইজিন৷ খাবার ও জলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা৷ না হলে হেপাটাইটিস এ ও ই হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ অর্থাত্‍ লিভারে এ বা ই ভাইরাসের ইনফেকশন হয়ে জন্ডিস হওয়া৷ বড় বয়সে হলে যা প্রায়শই যথেষ্ট ঘোরালো হয়ে ওঠে৷ হেপাটাইটিস বি ঠেকাতে বি ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা নিয়ে নেওয়া উচিত৷ আর হেপাটাইটিস সি ঠেকাতে সতর্ক থাকা দরকার রক্তের ব্যাপারে৷ রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে ভালো ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত, যারা হেপাটাইটিস সি স্ক্রিনিং করে তবে রক্ত বাজারে ছাড়েন৷ ইনজেকশনের সিরিঞ্জও যাতে স্টেরাইল থাকে সে দিকে নজর রাখা দরকার৷ কারণ বি এবং সি হেপাটাইটিসের পাল্লায় পড়লে লিভার একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *