সহবাসে মহিলাদের কষ্টদায়ক কিছু সমস্যা এবং তার কার্যকরী সমধান

অনেক সময়ই দেখা যায় বিবাহিত মহিলারা সহবাসে বেশ কিছু কষ্টদায়ক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। বিষয়গুলি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে তারা নিজেরাই এরকম অনেক সমস্যার সমাধান করে নিতে পারেন। আবার কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে তার জন্য যথাযথ ট্রিটমেন্ট নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু তারা সংকোচ করে তা চিকিত্সককে বলেন না, গোপনে গোপনে শুধু কষ্টই সহ্য করে যান যা করা আদৌ উচিত হয়। এমনি কিছু সমস্যা এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলো।

সহবাসে মহিলাদের কষ্টদায়ক কিছু সমস্যা ও সমধান
যৌন চাহিদা কমে যাওয়া
এর কারণ কি হতে পারে ?
মেনোপজের কাছাকাছি বয়সের মহিলাদের এটি একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। মেনোপজের আগে ইস্ট্রোজেন হরমোন লেভেল কমে যায়। লুব্রিকেশনের অভাবে ব্যথা ও ব্যথা থেকে আগ্রহ কমে যাওয়া এর প্রধান কারণ।
কি ভাবে সমাধান করবেন ?
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ইস্ট্রোজেন ক্রিম ও সাপোজিটরি আর লুব্রিকেন্ট (পিচ্ছিল কারক ) কাজ দিতে পারে। এতে কাজ না হলে আপনার হোমিওপ্যাথের সাথে কথা বলুন এবং চিকিত্সা নিন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নিশ্চিত সেরে যাবেন।
যৌন চাহিদা হওয়ার পরেও লুব্রিকেশনের অভাব
এর কারণ কি হতে পারে ?
অনেকেরই যৌন চাহিদা হওয়া সত্ত্বেও যৌন স্থান ভিজে না। পানিশূন্যতা, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ( কাউন্টার এন্টিহিস্টামিন), নার্সিং, মেনোপজের সময় হরমোন লেভেল পরিবর্তন এর উল্লেখযোগ্য কারণ।
কি ভাবে সমাধান করবেন ?
পিচ্ছিল কারক পদার্থ ব্যবহার করতে হবে, পানি জাতীয় ব্যবহার করলে ভালো, কারণ কনডম এর জন্যে নিরাপদ। কিন্তু কেউ যদি তৈলাক্ত পিচ্ছিল কারক ব্যবহার করে তখন এটি কনডমের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে দিতে পারে। রঙ দেয়া, সেন্ট দেয়া ও ফ্লেভার জাতীয় লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যাবে না। কারণ তা ইস্ট ইনফেকশন করে শুকনা ভাব আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেকের প্রশ্ন হতে পারে, ইস্ট ইনফেকশন কি তার পুরুষ সঙ্গীর শরীরেও ইনফেকশন করতে পারে? উত্তর হবে হ্যাঁ । এটি অনেক কমই হয়, কিন্তু হয়। একই রকম লক্ষণ যেমন- লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, যৌনমিলনের পর অস্বাভাবিক নিঃসরণ হতে পারে। কোন পুরুষের যদি ডায়াবেটিস থাকে, এন্টিবায়োটিক নিতে থাকে অথবা সে তার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোন কারণে কমে যায় তখন তার আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বেড়ে যায়। খৎনা করা না থাকলেও এর ঝুকি বেড়ে যায়। কারণ এর উপরের চামড়া ভেজা ভেজা অবস্থার সৃষ্টি করে যা ইস্ট বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে।
মিশনারি (পুরুষ উপরে থাকা ) পজিশনে যৌন মিলনে সমস্যা হওয়া
শতকরা ২০ ভাগ মহিলার জরায়ু নরমালের উল্টো দিকে থাকতে পারে অর্থাৎ পেটের দিকে না থকে শিরদাঁড়ার দিকে থাকেতে পারে। এ ক্ষেত্রে টেম্পুন বা ডায়াফ্রাম ব্যবহার করা কষ্টকর হয় কারণ তা জরায়ুর ভেতর পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তাই নারী উপরে থেকে মিলনে কষ্ট লাঘব হবে। আর মা হতে চাইলে যৌন মিলনের পর পেটের উপর অর্থাৎ উপুড় হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে তা স্পার্ম কে সাঁতরে জরায়ুমুখে যেতে সাহায্য করবে।
যৌনমিলনের পর তীব্র দুর্গন্ধ ও চুলকানি
এর কারণ কি হতে পারে ?
ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এমন হতে পারে। নতুন বা একাধিক মিলন সঙ্গীর কারণে এমন হতে পারে। যৌন স্থানের ভেতরে কিছু দেয়া থাকলে ( যেমন চিকিৎসার জন্যে বা রোগ নির্ণয়ে কোন কিছু ব্যবহার করা হলে ) তা থেকেও হতে পারে। এর পাশাপাশি ইনফেকশনের আরও কিছু লক্ষণ থাকতে পারে যেমন অস্বাভাবিক নিঃসরণ, জ্বালাপোড়া। চিকিৎসা না করা হলে ডেট এর আগেই ডেলিভারি হওয়া, স্বল্প ওজনের বাচ্চা জন্ম নিতে পারে।
কি ভাবে সমাধান করবেন ?
এন্টিবায়োটিক, যেমন- মেট্রোনিডাজল বা ক্লিন্ডামাইসিন ব্যবহারে লাভ হতে পারে। যাদের বাচ্চার জন্মকালীন ওজন কম বা যাদের ডেট এর পূর্বেই সন্তান জন্ম নিয়েছে তাদের স্ক্রিনিং করাতে হবে।
যৌন মিলনের পর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
এর কারণ কি হতে পারে ?
চাপে ঘষা লেগে মূত্রনালিতে ইরিটেশন হলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ মিলন আর যৌন স্থানের শুষ্ক ভাবও এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রস্রাব নালীতে ইনফেকশন হলেও এই সমস্যা হতে পারে। যদি প্রস্রাব যৌন স্থানে লাগার পর জ্বালাপোড়া হয় তবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মুত্রথলি খালি হওয়ার সাথে সাথে ব্যথা বাড়তে থাকলে মুত্রথলি ইনফেকশনের ব্যাপারেই সন্দেহ বেড়ে যায়।
কি ভাবে সমাধান করবেন ?
যৌন মিলনের পর বাথ টাব ভর্তি কুসুম গরম পানিতে বসে থাকলে ব্যথা কমতে পারে। তাছাড়া পিচ্ছিল কারক ব্যবহারেও মাঝে মাঝে উপকার পাওয়া যেতে পারে। যদি এসব কিছুতেই লাভ না হয় তবে ডাক্তার দেখাতে হবে কারণ তখন কারণটা ইনফেকশনের দিকেই বেশি ইঙ্গিত করে। পানি বেশি পান করলে পিচ্ছিলতা ও ইনফেকশন থেকে মুক্তি দুইটা জিনিসেই উপকার পাওয়া যায়।
সব শেষে কি করবেন ?
যখন দেখবেন কোনটাতেই কোনো ফল পাচ্ছেন না তখন কোনো প্রকার সংকোচ না করে আপনার হোমিওপ্যাথের সাথে কথা বলুন এবং চিকিত্সা নিন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সমস্ত সমস্যাবলী নিশ্চিতরূপে দূর হয়ে যাবে। কারণ স্ত্রীরোগসমূহের চিকিত্সায় এবং মহিলাদের জটিল রোগসমূহ নির্মূলে জন্মলগ্ন থেকেই হোমিওপ্যাথি এক এবং অদ্বিতীয় ভুমিকা পালন করে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *