মা হতে চলেছেন – জানেন কি এসময় কি কি করা দরকার ?

প্রত্যেক গর্ভবতী মা-ই সুস্থ, স্বাভাবিক গর্ভাবস্থা প্রত্যাশা করেন কারণ সুস্থ গর্ভাবস্থা মানে সুস্থ মা ও সুস্থ শিশু। কিন্তু এ জন্য গর্ভাবস্থায় কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা জরুরি। এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন ডক্তার হাবিবা খাতুন।
মা ও শিশুর সুস্থতার জন্য গর্ভবতী মায়ের প্রসব-পূর্ব যত্ন নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় মোট ১৪ বার চিকিৎসক, নার্স বা অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যেতে হবে। প্রথম সাত মাসে প্রতি মাসে একবার করে মোট সাতবার (প্রতি চার সপ্তাহে একবার), অষ্টম মাসে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে মোট দুবার এবং পরে সন্তান প্রসব হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার করে মোট পাঁচবার (সর্বমোট ১৪ বার যাওয়া ভালো)।
যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কমপক্ষে তিনবার যেতে হবে। প্রথম ২০ সপ্তাহের মধ্যে একবার, ৩২ সপ্তাহের সময় একবার ও ৩৬ সপ্তাহের সময় একবার। এ সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখতে হয়, শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কি না। রক্তশূন্যতা, উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না। পায়ে বা শরীরের অন্যান্য স্থানে পানি এসেছে কি না (প্রি-একলাম্পশিয়া)।
এ ছাড়া ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করে রক্তের গ্রুপ জানা, ডায়াবেটিস আছে কি না তা আগেভাগেই পরীক্ষা করিয়ে নিলে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। গর্ভের ভ্রূণ ঠিকমতো বাড়ছে কি না, ভ্রূণের কোনো শারীরিক ত্রুটি আছে কি না, জরায়ুর ভেতর পানির পরিমাণ ঠিক আছে কি না, জরায়ুর ভেতর ফুলের অবস্থান কোথায়, এর অবস্থাই বা কেমন ইত্যাদি দেখার জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে হয়।
কিছু সাধারণ সমস্যায় সমাধান
কোষ্ঠকাঠিন্য :-
গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। দিনে অন্তত আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। আঁশ আছে এ রকম খাবার, যেমন- শাকসবজি, ফলমূল, বিচিজাতীয় খাবার, ডাল, আটা ইত্যাদি খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করার জন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।
বমি বমি ভাব বা বমি :-
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস দিনের শুরুতে বমি বমি ভাব হয় বা বমি হয়। তাই অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিস্কুট, টোস্ট-জাতীয় শুকনো কিছু খাবার খেলেও উপকার হয়। তৈলাক্ত খাবার কম খেলেও উপকার। বমি খুব বেশি হলে বা সমস্যাটা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বুকজ্বলা :-
এসিডিটি বা বুকজ্বলা হলেও অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেতে হবে। তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া ও বেশি মসলাযুক্ত খাবার কম খান। একসঙ্গে বেশি খাবার না খেলেও উপকার পাওয়া যায়। খাওয়ার সময় পানি কম খান। দুই খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। খাওয়ার পরপরই উপুড় হওয়া বা বিছানায় শোয়া উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যান্টাসিড-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
এসব থেকে রক্ষা পেতে যা যা করা দরকার :-
খাবার হোক স্বাস্থ্যকর :-
খাবার হবে বাড়তি ক্যালরিযুক্ত। গর্ভের সন্তানের জন্য এ সময় বাড়তি খাবার প্রয়োজন। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে জন্য খাবারে থাকতে হবে পর্যাপ্ত আঁশ। তেমনি খাবারের আঁশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করবে। খাবারে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ, শাকসবজি ও ফলমূলে পাওয়া যাবে। দুধ, ডিম ও মাছ খাওয়া ভালো। মাছে আছে ওমেগা-৩, যা শিশুর বিকাশে সহায়ক। যথেষ্ট পানিও পান করতে হবে প্রতিদিন।
বিশ্রাম নিন পরিমিত :-
  • হালকা ব্যায়াম করুন নিয়মিত।
  • সারা দিন শুয়ে-বসে অযথা থাকবেন না, আবার দিনভর পরিশ্রমও নয়। কাজের ফাঁকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
  • ঘরের কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করতে হবে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে কমপক্ষে।
  • দিনে-রাতে মিলিয়ে সাত-আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। দুপুরে খাওয়ার পর অল্প ঘুমানো যেতে পারে।
  • আরামদায়ক সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। হাইহিল নয়। ফ্ল্যাট চটি স্যান্ডেল বেছে নিতে হবে। এতে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় থাকবে। পিঠ, কোমর ও পায়ের পেশিতে ব্যথা করবে না।
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় গর্ভের সন্তানের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়। তাই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না।
  • গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে গর্ভের সন্তান কম ওজনের হয়। পরোক্ষ ধূমপানেও একই ক্ষতি। সুতরাং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে।

Leave a Reply