নারীদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব – কারণ, লক্ষণ ও কার্যকর চিকিৎসা

নারীদের অনিয়মিত ঋতু (Irregular menstruation) :- নারীদের প্রতি ২৮ দিনে জরায়ুদ্বার দিয়ে সামান্য কালো লাল বর্ণের পাতলা স্রাব হয়। সাধারণত ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত স্রাব বর্তমান থাকে। স্রাবের স্বাভাবিক পরিমান থাকতে হবে। খুব বেশিও নয় আবার অতি সামান্যও নয়। এই সকল নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই অনিয়মিত ঋতুদোষ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। ঋতু সংক্রান্ত বিষয়টি আবার দৈহিক গঠনের সাথেও সম্পর্কিত।

নারীদের অনিয়মিত ঋতুর কারণ :- সাধারণত ঋতুস্রাব ৪/৫ দিন বর্তমান থাকে। এই সময় যোনির মাধ্যমে প্রায় এক থেকে দেড় পোয়া রক্ত দেহ থেকে নিঃসৃত হয়। নিয়মিত স্রাব ২৮ দিন অন্তর হয়ে থাকে কিন্তু স্রাব অনিয়মিত হলে সময়ের কোন নির্দিষ্ঠ ভাব থাকে না। বিভিন্ন কারণে মাসিক স্রাবের অনিয়মিত ভাব দেখা দিতে পারে। কখনো দেরিতে হয় আবার কখনো বা দ্রুত হয়। যে সকল কারণে নারীদের স্রাব অনিয়মিত হয় তার মধ্যে প্রধান হলো :-

  • দেহের হরমোন জনিত গোলযোগ বা হরমোনের অভাব।
  • ডিম্বকোষ হতে ঠিক মতো নিঃসরণ হয় না।
  • জরায়ু বা ডিম্বকোষের রোগ থাকলে।
  • দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির অভাব হলে।
  • দেহের এবং যৌন অঙ্গের পূর্ণ বিকাশের অভাব হলে।
  • দেহে রক্ত শুন্যতার ভাব থাকলে।
  • গনোরিয়া, সিফিলিস জাতীয় কঠিন প্রকৃতির রোগ থাকলে।

নারীদের অনিয়মিত ঋতুর লক্ষণ :-  নারীদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত হলে বেশ কিছু  লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :

  • ঋতুস্রাব হঠাৎ বন্ধ হয়ে ঐরূপ ২/৩ মাস পর্যন্ত থাকে। কখনো বা ৪/৫ মাস পর্যন্ত বন্ধ থেকে হঠাৎ অধিক পরিমানে স্রাব অথবা ১০/১৫ দিন পর্যন্ত অল্প অল্প স্রাব নিঃসরণ হয়।
  • ঋতুস্রাব হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, আবার দুই তিন মাস হয় না, কখনো বা ১৫/২০ দিন বন্ধ থাকে। কখনো বা ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার পর ৮/১০ দিন বা ১০/১৫ দিন পর্যন্ত কম বেশি চলতে থাকে।
  • ঋতুস্রাব ১৫/২০ দিন বন্ধ থেকে ফোটা ফোটা ঋতু হতে থাকে। কখনো ঠিকমতো চলে আবার কখনো বা হঠাৎ গোলমাল দেখা দেয়।
  • রোগী তলপেটে ভয়নক ব্যথা অনুভব করে। কখনো বা কালচে বর্ণের রক্তস্রাব হতে থাকে। কখনো বা স্রাবের রক্তে ছোট ছোট কালো টুকরা দেখা যায়।
  • অনিয়মিত ঋতুস্রাবের রোগীদের আরো কতগুলি লক্ষণ প্রকাশ লাভ করে যেমন – তলপেটে খিল ধরার মত ব্যথা, প্রসব বেদনার মত ব্যথা, বার বার মল ত্যাগের প্রবৃত্তি, কোষ্ঠকাঠিন্যের ভাব ইত্যাদি।
  • ঋতুস্রাব আরম্ভ হলে প্রচন্ড বমি এবং বমি বমি ভাব, আবার কখনো বা ঋতুস্রাব আরম্ভ হলে সব যন্ত্রণার অবসান হয়। সামান্য বিরতিতে চাপ চাপ রক্তস্রাব হয়, রোগী মনে করে উদরের মধ্যে সজীব কোন পদার্থ নাড়াচাড়া করছে।
  • কখনো বা কেবলমাত্র রাত্রিকালে ঋতুস্রাব হয়, কখনো বা শুধু দিনে হয়। ঋতুস্রাব কালে স্তন দুটি প্রদাহিত ও বেদনাযুক্ত হয়। ঋতুস্রাব আরম্ভ হবার পূর্বে গলায় ও স্তনে বেদনা অনুভব হয়।
  • কখনো বা শুয়ে থাকলে ঋতুস্রাব হয়, বসলে বা হাটাচলা করলে বন্ধ হয় আবার কখনো বা দুই সপ্তাহ অন্তর ঋতুস্রাব হয়। স্রাব চটচটে ও শ্লেষ্মাপূর্ণ হতে পারে আবার কালো বর্ণের বা মাংস ধোয়া জলের মত হতে পারে।
মা বোনদের অনেককেই এই অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। গ্রামগঞ্জে মহিলারা বিষয়টি নিয়ে নানা প্রকার কুসংস্কারের শিকার হয়ে থাকেন এবং বছরের পর বছর প্রপার ট্রিটমেন্ট না নেয়ার কারণে ভুগতে ভুগতে শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্র্রায় হাড্ডিসার করে তুলেন। শুধু তাই নয়, শহুরে শিক্ষিত অনেক তরুণীদেরকেও দেখা যায় বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকার কারণে যথাযথ চিকিৎসা না নিয়ে রোগটি পোষে রাখে এবং একসময় এর থেকে আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে বসে। হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা বিজ্ঞানে অনিয়মিত ঋতুস্রাব নির্মূলের সম্পূর্ণ আরোগ্যকারী সমাধান রয়েছে। কিছু দিন যথাযথ হোমিও ট্রিটমেন্ট নিলে মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব রোগ পরুপুরি দূর হয়ে আবার ঋতুস্রাব স্বাভাবিক হয়ে যায়। তাই এতে আক্রান্ত হলে কোন প্রকার সংকোচ না করে ভালো এবং অভিজ্ঞ একজন হোমিও চিকিত্সকের স্মরনাপন্ন হোন এবং প্রপার ট্রিটমেন্ট নিন, আশা করি খুব শীঘ্রই সুস্থ এবং স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *