দাঁতের ক্ষয়রোগের কারণ এবং প্রতিকার জেনে নিন।

দাঁতের ক্ষয়রোগের কারণ এবং প্রতিকার:

দাঁতের ক্ষয় নিয়ে অনেকেই ভুক্তভোগী রয়েছেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়িয়ে দাঁতকে সুস্থ রাখা যায়।

👉দাঁতের ক্ষয়রোগের কারণগুলো কি কি?

1⃣ সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ না করার জন্য:
প্রথমত সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ না করার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। মজার বিষয় হলো দাঁত ব্রাশ করি একে যত্নে রাখার জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভুলভাবে ব্রাশ করার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।

2⃣ শক্ত ব্রাশ ব্যবহার:
আমাদের মধ্যে অনেকেই শক্ত ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করছেন। শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করলে দাঁত ভাল পরিস্কার হবে, এটি ভুল ধারণা। এর কারণে তার দাঁত ক্ষয় হওয়া শুরু করে।

3⃣দাঁতের এবরেশনের কারনে:
জোরে জোরে শক্ত ব্রাশ দিয়ে সঠিক উপায় না মেনে দাঁত ব্রাশ করার কারনে এবরেশন হয়। দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে থাকলে, এটি যদি বের করতে না পারি সে ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে এটি ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যায়, দাঁতের গোড়া মাড়ি থেকে আলাদা হয়ে যায়।

4⃣ পান-সুপারি, জর্দা খাওয়ার অভ্যাস:
মানুষ পান-সুপারি, জর্দা ইত্যাদি খায়। অথবা শক্ত কোনো খাবার ইচ্ছামতো চিবিয়ে খায়, এ ক্ষেত্রেও দাঁত ক্ষয় হয়।

5⃣ বিভিন্ন খাবারের রাসায়নিক জিনিসের কারনে:
বিভিন্ন খাদ্য খাওয়ার ফলে রাসায়নিক জিনিসের কারণে দাঁতের ক্ষয় হয়। যেমন : বিভিন্ন ফল, জুস , অ্যালকোহল, সোডা, ওয়াইন ইত্যাদি।

6⃣ অ্যাসিডিটির কারনে:
যাদের অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের ইরোশন দেখা দিতে পারে।

7⃣ ছোটখাটো কিছু বদ অভ্যাসের জন্য:
দাঁত দিয়ে নখ কাটা, সুতো কাটা, বোতলের মুখ খোলা, কলম পেন্সিল কামড়ানো এগুলোর কারনে দাঁতের ক্ষয় হয়। আবার ঘুমের মধ্যেও অনেকের দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস থাকে, এর কারনেও দাঁতের ক্ষয় হয়।

👉দাঁতের ক্ষয়ের প্রধান কারণ, “ডেন্টাল ক্যারিজ” এর প্রধান কারণগুলো:
যে খাবার খাচ্ছি এতে কার্বোহাইড্রেট বা সুগার থাকে। যদি খাবার আটকে থাকে এবং সময়মত ব্রাশ না করা হয় এখানে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করবে।
আমরা যদি দাঁতের গঠন চিন্তা করি, প্রথম এনামেল, এরপর ডেনটিন। তাহলে এখানে প্রথমে এনামেল ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ডেনটিন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ক্যারিজ হচ্ছে।

👉এনামেল ক্ষয় হলে কিভাবে বুঝা যায়?
এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেরই ছোটবেলাতে দাঁত সাদা ছিল কিন্তু এখন হলুদ হয়ে যাচ্ছে। এটির কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এনামেলের ক্ষয়। এনামেলের রং সাদা । ঠিক এনামেলের নিচের যে অংশটুকু রয়েছে এটা হলুদ। এনামেল যখন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ডেনটিন বের হচ্ছে। তখনই হলুদ রং বের হয়ে আসছে। রোগী তখন মনে করে হয়তো আমি দাঁত ঠিকমতো ব্রাশ করছি না বলে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। তখন রোগী আরো জোরে দাঁত ব্রাশ করা শুরু করে দেয়। তখন আরো ক্ষয় হয়ে যায়। আরো হলুদ হয়ে যায়। যখনই ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যাচ্ছে, এর কারণ এনামেল ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীকালে অনেক রোগী অভিযোগ করে আমার দাঁত শির শির করছে। যেহেতু ডেনটিনে স্পর্শকাতরতা তৈরি করছে। যেহেতু এটার নিচে পাল্প বা মজ্জা রয়ে গেছে তাই এই সমস্যা হয়।

👉 দাঁতের ক্ষয় কিভাবে বুঝা যাবে?
যে কেউ বলল, আমার দাঁতে খাবার আটকে থাকছে। সে জানতে পারছে না কালো দাগ রয়েছে। অনেক সময় এসে বলে, আমার দাঁত কালো হয়ে যাচ্ছে। অথবা বলল, আমার এখানে খাবার আটকে যাচ্ছে। সে সময় দেখা যায় ওখানে একটা গর্ত রয়ে গেছে। অর্থাৎ ক্যারিজ বা ক্যাভিটি হয়ে গেছে। তখন রোগী অস্বস্থিবোধ করে, শিরশির করে অথবা কখনও ভীষণ রকম দাঁত ব্যথা অনুভব করে।

👉 ডাক্তারের কাছে কখন আসা উচিত?

– দাঁতের কোন খাবার আটকিয়ে অস্বস্তিবোধ করলে
– দাঁতে শিরশির অনুভব করলে।
– দাঁতে ব্যথা অনুভব করলে।
– মাড়ি থেকে রক্ত বের হলে
– মুখে দুর্গন্ধ হলে
উপরের কোনটি দেখা গেলে নিকটস্থ দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
তাছাড়া প্রতি ৬মাসে একবার নিকটস্থ ডাক্তারের কাছে দাঁত চেক আপ করিয়ে নেওয়া উচিত।

👉 দাতের ক্ষয়রোধে চিকিৎসা ও পরামর্শ:

1⃣ চিকিৎসার চাইতে প্রতিরোধে নজর দিতে হবে:

ক) প্রতিরোধের প্রথম কথা হলো সঠিক উপায়ে নরম টুথব্রাশ এবং গুনগতমানের পেস্ট দিয়ে 2 মিনিট দাঁত ব্রাশ করতে হবে। প্রতিদিন রাতের ঘুমানোর আগে এবং সকালের নাস্তা খাবারপর দাঁত ব্রাশ করতে হবে।

খ) দাঁতের ফাঁকের ময়লা ডেন্টাল ফ্ল্যাশ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে।

গ) দাঁত দিয়ে সুতা কাটা , নখ কাটা, বোতলের মুখ দাঁত দিয়ে খোলা, কলম কিংবা পেন্সিল কামড়ানোর মত বদ অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে।

ঘ) চিনি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড, চকলেট, কোমল পানীয় বেশি বেশি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ঙ) ধুমপান, অ্যালকোহল, পান, সুপারি, জর্দা পরিহার করতে হবে।

চ) ঘুমের মধ্যে দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ি মাউথগার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।

2⃣ ব্যথা শুরু হওয়ার পর রোগীর চিকিৎসা:

সে ক্ষেত্রে রুট ক্যানেল চিকিৎসা ছাড়া আর উপায় নেই। মজ্জা বা পাল্পে গিয়ে যখন লেগে যায় সে ক্ষেত্রে আর ফিলিংয়ে কাজ হবে না। পাল্পকে পুরোপুরি বের করে ফেলতে হবে।

3⃣ নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া:

বছরে দুবার অর্থাৎ ছয় মাস পর পর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। তাহলে শুরুর দিকে সমস্যা জেনে গেলে সে আর ভুগবেন না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *