জরায়ু নেমে আসা এবং কার্যকরী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

আপনার হয়ত দেখে থাকবেন নারী দেহের অনেক সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে জরায়ু নেমে আসা। জরায়ু একটি গুরু্ত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা নারীদেহে সন্তান ধারণ করে। জরায়ুতে যে কোন ধরনের সমস্যা নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিরুপ প্রভাব ফেলে। কিন্তু সামাজিক সংস্কার, লজ্জা ও পরিবারে নারীর অধঃস্তন অবস্থানের কারণে জরায়ুতে কোন সমস্যা হলে নারী তা প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করে। এটা খুবই খারাপ একটা দিক।
জরাযু নেমে আসার কারণ :-
তলপেটের ভিতরে জরায়ু বা বাচ্চার থলি (যেখানে গর্ভাবস্থায় বাচ্চা থাকে) মাংসপেশী ও রগ (লিগামেন্ট-এক ধরনের বন্ধনী যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গনে যথাস্থানে আটকে রাখতে সাহায্য করে) দ্বারা আটকানো থাকে। যদি কোন কারণে এই পেশী ও রগগুলো ছিঁড়ে যায়, ঢিলা হয়ে যায় অথবা দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন জরায়ু সঠিক স্থানে আর থাকতে পারে না এবং ক্রমান্বয়ে যৌনপথ দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে।
জরায়ু নেমে আসার সম্ভাব্য কারণ :-
  • অল্প বয়সে গর্ভধারণ করলে জরায়ু ও এর ধারক রগগুলো পূর্ণতা পায় না। তাই এগুলো সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • বার বার গর্ভধারণ করলে জরায়ু ও রগগুলোর উপর ক্রমাগত চাপ পড়তে থাকে। ফলে এদের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে এগুলি ঢিলা হয়ে যায়।
  • মাসিক বন্ধ হবার পর যখন জরায়ুর ধারক পেশী ও রগগুলো শুকিয়ে যায় তখন জরায়ু বের হয়ে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • বাধাগ্রস্থ প্রসবের ক্ষেত্রে আনাড়ী দাই দ্বারা বাচ্চা প্রসব করালে জোরে বাচ্চা টেনে বের করার সময় রগুলো ছিঁড়ে যায়। তখন জরায়ু বের হয়ে আসে।
  • দীর্ঘস্থায়ী প্রসব বেদনার ক্ষেত্রে জরায়ু ও রগগুলো শক্তিহীন হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জরায়ু নেমে আসার (বিশেষ করে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর) সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • এছাড়াও দুর্বল জরায়ুর উপর দীর্ঘদিন যাবৎ কোন চাপ অনুভুত হলে (যেমন দীর্ঘস্থায়ী কাশি, পেটে বা জরায়ুতে টিউমার, ক্রমাগত ভারঅ কাজ করা) আস্তে আস্তে জরায়ু বের হয়ে আসে।
  • গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পর ভারী কাজ করলে, পুষ্টিকর খাবার না খেলে, বিশ্রাম ও শরীরচর্চা না করলে জরায়ুর আর পূর্বাবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব হয় না। ফলে পরবর্তীতে জরায়ু বের হয়ে আসতে পারে।
জরায়ুর নেমে আসা বুঝার উপায় :-
যদি কখনো কখনো শুরুতেই সম্পূর্ণ জরায়ু যৌনিপথে বের হয়ে আসে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ একটু খেয়াল করলে অনেকেই হয়ত দেখে থাকবে বা শুনে থাকবে যে, ‘যোনিপথে কি যেন বের হয়ে আসছে। বসলে বা কাশি দিলে তা বেশি অনুভুত হয়’। এটি জরায়ু নেমে আসার প্রাথমিক পর্যায়। এই সময়ে জরায়ু যৌনিপথে অবস্থান করে। তবে যে সমস্যা এই সময়ে প্রধান হয়ে দাঁড়ায় তা হলো, প্রস্রাব ও পায়খানা অসম্পূর্ণতা। জরায়ু নেমে আসার সময় এর সাথে মুত্রথলি ও মলাশয়ের কিছু অংশ নেমে আসে যা থলির মতো ঝুলতে থাকে, এই থলিতে কিছু প্রস্রাব ও পায়খানা আটকে থাকে। হাঁচি বা কাশি দিলে এই আটকে থাকা প্রস্রাব ও পায়খানা হঠাৎ বের হয়ে আসে। তাই প্রস্রাব ও পায়খানা সম্পূর্ণ করতে এই সময়ে আঙ্গুল দিয়ে জরায়ুকে আবার ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হয়।
জরায়ু সমস্যার প্রাথমিক এই পর্যায়ে তেমন কোন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা নেই। তবে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, শরীরচর্চা এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য এ অবস্থাকে কিছুটা উন্নত করতে পারলে অথবা অবস্থা পরিবর্তিত রাখতে পারে। কিন্তু এ অবস্থায় আবার গর্ভধারণ করলে, আনাড়ী ধাত্রী দ্বারা প্রসব করালে, ভারী জিনিস উঠালে অথবা দীর্ঘস্থায়ী কাশি হলে এবং অনেকের ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর জরায়ু সম্পূর্ণ বের হয়ে আসে। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই যদি কেউ হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সা গ্রহণ করে তবে খুব দ্রুত এটা সেরে যায়।
কোন নারীর জরায়ু যখন যৌনিপথ দিয়ে সম্পূর্ণ বের হয়ে দু’পায়ের মাঝখানে ডিম বা বলের আকারে ঝুলতে থাকে তথন প্রস্রাব ও পায়খানার সমস্যা ছাড়াও তার স্বাভাবিক জীবনধারায় বিঘ্ন ঘটে। তখন তিনি স্বাভাবিকভাবে বসতে পারেন না, হাঁটা-চলায় সমস্যা বোধ করেন ও সহবাসে তার সমস্যা হয়। পরবর্তীতে সেখানে ঘাঁ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং নানা জটিলতা দেখা দেয়।
সাধারণত অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারগণ যখন বিভিন্ন প্রকার ঔষধ প্রয়োগ করে ব্যর্থ হন তখন অস্ত্রপচার এর মাধ্যমে জরায়ু অপসারণ করার কথা বলেন। তবে অস্ত্রোপচারটি বেশ জটিল, দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ। জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ হোমিওপ্যাথরা শুধু মাত্র কিছু দিন ঔষধ প্রয়োগ করেই সম্পূর্ণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন চিকিত্সা প্রদান করে অত্যন্ত সফলতার সাথেই এই সমস্যা সারিয়ে তুলেন। এবার আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন  মা, বোনদের এই সমস্যা সমাধানে ঝুঁকিপূর্ণ অপসারণ করবেন, নাকি কিছু কাল হোমিওপ্যাথিক চিকিত্সা নিয়ে চিরদিনের জন্য আরোগ্য লাভ করাবেন।
জরায়ু নেমে আসা প্রতিরোধে করণীয় :-
  • নিজের সমস্যা নিজেকেই চিহ্নিত করতে হবে এবং সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • অল্প বয়সে বিয়ে করা ও বিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ঘন ঘন বাচ্চা না নেয়া। এ জন্য প্রথম বাচ্চা হবার পর থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় এবং দ্বিতীয় বাচ্চা নেয়ার আগে অন্তত তিন বছরের বিরতি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • বেশি বাচ্চা না নেয়া। এ জন্য দু’টি বাচ্চা হবার পর দীর্ঘস্থায়ী বা স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে ভারী কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, শরীরচর্চা ও নিয়মিত জরায়ুর ধারক মাংসপেশী, রগ ও অঙ্গগুলোর ব্যায়াম (পেরিনিয়াল এক্সারসাইজ) করতে হবে।
  • চিকিৎসক, নার্স বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীর সাহায্যে সন্তান প্রসব করাতে হবে।
  • প্রসব বিলম্বিত হলে প্রসূতিকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।

Leave a Reply