এলার্জি কী?
কোন কিছুর প্রতি শরীরের অস্বাভাবিক রকমের প্রতিক্রিয়া বা সংবেদনশীলতাকেই এলার্জি বলে। সহজভাবে বললে, মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা বা ইমিউন সিষ্টেমের কাজ ক্ষতিকর বস্তুকে (ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন জীবাণু) প্রতিরোধ করা। কখনও কখনও শরীর, ক্ষতিকর নয় এমন অনেক বস্তুকে ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে৷ এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এই অস্বাভাবিক রকমের প্রতিক্রিয়া বা সংবেদনশীলতাকেই এলার্জি বলা হয় যার বহিঃপ্রকাশ হয় বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে। তখন ঐ বস্তুটি শরীরে আর সহ্য হয় না। এটা ঠাণ্ডা, ধুলা-বালি ও খাবারের প্রতি হতে পারে।
এসব সংবেদনশীল বস্তুকে এলার্জি বলে৷ এর মধ্যে রয়েছে ধুলা-বালি, ফুলের গন্ধ বা রেনু, কুয়াশা, ঠাণ্ডা বাতাশ, খাবার যেমন- গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ কিংবা গরুর দুধ ইত্যাদি। এসবের প্রতি শরীরের এই সংবেদনশীলতাকে কোল্ড এলার্জি, ডাস্ট এলার্জি বা ফুড এলার্জি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। সাধারণত ইমিউন সিষ্টেমে গোলযোগ দেখা দিলে এলার্জির সমস্যা হয়।
লক্ষণ ও উপসর্গঃ
• এলার্জি জনিত সর্দি কিংবা এলার্জিক রাইনাইটিসের উপসর্গ হচ্ছে অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া কিংবা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
• চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ চুলকায় ও লাল হয়ে যায়।
• অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট সহ ঘন ঘন কাশি, বুকের ভিতর সাঁই সাঁই শব্দ ও বুকে চাপ চাপ লাগা।
• ত্বকে চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠা সাথে চুলকানি ও রেস হওয়া।
• বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঠান্ডা লাগা।
কীভাবে পরীক্ষা করা হয়?
* Skin Prick Test: ডাস্ট, মাইট, ফুলের রেণু, ফাঙ্গাস,ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য দিয়ে ত্বকে অ্যালার্জি টেস্ট করা হয়।
* Cir Eosinophil Count: রক্তের ইয়োসিনোফিলের মাত্রা এলার্জির সমস্যায় বেশি হয়৷
* Serum IgE: সাধারণত এলার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে IgE এর মাত্রা বেশি থাকে।
এলার্জি(ইংরেজি ভাষায়: Allergy) বলতে পরিবেশে অবস্থিত কতকগুলো বস্তুর প্রতি শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ তন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতার ফলে সৃষ্ট কতকগুলো অবস্থাকে বুঝায় যা অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো সমস্যা তৈরি করে না। এই অবস্থাগুলোকে একত্রে এলার্জি
ডিজিজ বা এলার্জি জনিত রোগ বলে।
[১] এগুলোর মধ্যে হেই ফিভার, এলার্জি, অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস,এলার্জি হাঁপানি ও অ্যানাফাইল্যাক্সিস উল্লেখযোগ্য। [২]লক্ষণগুলো হলো চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি, রাইনোরিয়া বা নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট অথবা ফুলে যাওয়া। [৩]খাবার সহ্য না হওয়া ও খাদ্য বিষক্রিয়া দুটি আলাদা বিষয়।খুব সাধারণ এলার্জিকারক বস্তু হলো পরাগ বা পুষ্পরেণু ও কিছু খাবার। ধাতবসহ অন্যান্য বস্তুও সমস্যা তৈরি করতে পারে। খাবার, কীটপতঙ্গের হুল ও ঔষধ তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী। জেনেটিক ও পরিবেশগত কারণে এসকল বিক্রিয়া হয়ে থাকে।শরীরের ইমিউন তন্ত্রের একটি উপাদান ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ই (IgE) এক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। এর এক অংশ এলার্জিকারক বস্তুর সাথে এবং অপর অংশ মাস্ট কোষ বা বেসোফিলের রিসেপ্টরের সাথে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে উক্ত কোষসমূহ থেকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী কতকগুলো রাসায়নিক পদার্থ বের হয় যেমন হিস্টামিন।
[৭] রোগনির্ণয় মূলত রোগের ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল। মাঝে মাঝে চর্ম ও রক্তের কিছু পরীক্ষাও করা হয়।[৫] কোনো ব্যক্তির কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি সংবেদনশীলতা টেস্টের ফলাফল পজিটিভ হলেও ঐ ব্যক্তির যে উক্ত বস্তুর প্রতি তাৎপর্যপূর্ণ এলার্জি রয়েছে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না।নাক দিয়ে পানি পড়া, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট বা যন্ত্রণার মত অস্বস্তিকর সমস্যাগুলোই হতে দেখা যায় এলার্জি হলে।এলার্জি কারণে মুডও খারাপ হয়ে যায়। এলার্জি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরণের ঔষধ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয় যেমন- ব্রঙ্কোডাইলেটরস, কর্টিকোস্টেরয়েডস, ন্যাজাল ডিকঞ্জেস্টেন্ট এবং অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ। কিন্তু ঔষধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে তা শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক উপাদানের দ্বারাও এলার্জি প্রতিরোদ করা যায়। আসুন তাহলে এমন কিছু খাবারের কথাই জেনে নিই যা এলার্জি প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
১। রসুন:-
রসুন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও থাকে। এক টুকরো রসুন খাওয়া ঔষধ খাওয়ার মতোই আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা দেয়।
২। হলুদ:-
হলুদে এমন উপাদান থাকে যা এলার্জি ভালো করতে সাহায্য করে। এতে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কারকিউমিন থাকে। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের গবেষকদের মতে হলুদে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগাল উপাদান আছে।
৩। দই:-
দই এর ভালো ব্যাকটেরিয়া এলার্জি কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দাবী করা হয়েছে যে যারা নিয়মিত দই খান তাদের ইনফ্লামেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৪। মাছ:-
ফ্যাটি ফিশ ইনফ্লামেশন কমাতে পারে।এলার্জি প্রতিরোধের জন্য সপ্তাহে একদিন ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ খান।
৫। ভিটামিন সি:-
ভিটামিন সি দুই ভাবে সাহায্য করে। ইমিউনিটিকে উদ্দীপিত করে এবং এলার্জি প্রতিরোধ করে। নিয়মিত কমলা বা লেবুর রস গ্রহণ করুন।
৬। পেঁয়াজ:-
পেঁয়াজে কোয়ারসেটিন নামক উপাদান থাকে যা এলার্জি কমাতে পারে। এটি প্রদাহ কমতে এবং ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে।
৭। ভিটামিন ই:-
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার যেমন অ্যাভোকাডো, বাদাম এবং সবুজ শাকসবজি খেলে এলার্জিকে প্রতিরোধ করা যায়।
এলার্জিজনিত রোগের ঘরোয়া সমাধান
বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের কাছে এক অসহনীয় ব্যাধি। এলার্জি হাঁচি থেকে শুরু করে খাদ্য ও ওষুধের ভীষণ প্রতিক্রিয়া ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জি সামান্যতম অসুবিধা করে, আবার কারো ক্ষেত্রে জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কার করছেন? হঠাৎ করে হাঁচি এবং পরে শ্বাসকষ্ট অথবা ফুলের গন্ধ নিচ্ছেন বা গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ ও গরুর দুধ খেলেই শুরু হলো গা চুলকানি বা চামড়ায় লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে ওঠা। এগুলো হলে আপনার এলার্জি আছে ধরে নিতে হবে।
মানব জীবনে এলার্জি কতটা ভয়ংকর সেটা ভুক্তভোগী যে সেই জানে। উপশমের জন্য কতজন কত কি না করেন।
এবার প্রায় বিনা পয়সায় এলার্জিকে গুডবাই জানান আজীবনের জন্য। যা করতে হবে আপনাকে –
আমাদের দেশে একটি কথা প্রচলিত আছে- “যে বাড়িতে নিম গাছ থাকে সেই বাড়িতে একজন ডাক্তার বাস করে।”