আর্সেনিকাম এলবামের বিস্তারিতঃ

ভারতের আয়ুস মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের নির্দেশনায় আর্সেনিক এলবাম ৩০ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইমিউন বুস্টার হিসেবে সেবনের নির্দেশনা দিয়েছে।
তাই ঔষধটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক

আর্সেনিক এলবাম ( Arsenic alb )

আর্সেনিকের প্রতিশব্দ:-
এসিডাম আর্সেনিকাম
আর্সেনিকাম
সাদা আর্সেনিক
আর্সেনিকাম এসিড
আর্সেনিক ব্লেন্স
আর্সেনিক ট্রায় অক্সাইড

আর্সেনিকের উৎস:-

সেঁকো বিষ হইতে এই ঔষধ প্রস্তুত হয়। আর্সেনিকের ধাতব পদার্থ ঝলসাইয়া আর্সেনিক এলবাম পাওয়া যায় ।
ইহা সাদা ভারী বিচূর্ণ পদার্থ রুপ লাভ করে অথবা ছোট বড় পিন্ড যে অবস্থাতেই থাকে তাহা কাঁচ ভাঙ্গার মত প্রতীয়মান হয় ।
ইহা একটি তীব্র বিষাক্ত পদার্থ ।

ক্রিয়াস্থান :- প্রায় সমস্ত শরীরে আর্সেনিকের বিশেষ ক্রিয়া দর্শে । বিশেষতঃ স্নায়ুমন্ডল, চর্ম, শ্লৈম্মিক ঝিল্লী, মূত্রযন্ত্র, হৃদপিন্ড ও পাকস্থলীর উপর ইহার প্রাধান ক্রিয়া ।

জ্বালা পোড়ায় আর্সেনিকঃ-

জ্বালাময় অনুভূতির শ্রেষ্ঠ ঔষধ আর্সেনিকঃ তরুন পীড়া অপেক্ষা পুরাতন পীড়াতেই এরূপ দাহ বা জ্বালা থাকিলে আর্সেনিক উপকরী ! তরুন রোগে এরূপ গাত্রদাহে সালফারই উরকারী ! কিন্তু ওলউঠার ন্যায় তরুন পীড়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয় !
আর্সেনিক সেবন করিলে ওলাউঠার ন্যায় সব রকম লক্ষন সৃষ্টি হয় ! আর্সেনিকের বিশেষত্ব উত্তাপে উপশম এবং ঠান্ডায় বৃদ্ধি !

আর্সেনিকের বিশেষ লক্ষন:-

১) মৃত্যুভয় ।
২) ছটফটানি ও এপাশ ওপাশ করা।
৩) সর্ব্বাঙ্গে আগুনে পুড়ে যাওয়ার মত জ্বালা কিন্তু গরমে উপশম।
৪)মধ্যরাতে ও মধ্য দিবা রোগের বৃদ্ধি( Mid night and mid day) ।
৫) নাসিকা দিয়া জলের মত গরম সর্দ্দি।
৬) চিৎ হইয়া শুইতে অক্ষমতা ।
৭) সন্দেহ পরায়ন ।
৮)প্রবল পিপাসা থাকা সত্ত্বেও ক্ষণে ক্ষণে স্বল্প জলপান ।
৯) জলপান করা মাত্রই বমি ও কখনও পাতলা পায়খানা ।

শিশুদের বিষেশ লক্ষন :-

রাত্রে ঘুমের মধ্যে কথা বলে, অল্পতে রাগ করে ও চটিয়া উঠে ।

আর্সেনিকের মানসিক লক্ষন:-

মানসিক উৎকন্ঠা ও অস্থিরতা, রোগী সব সময় স্থান পরিবর্তন করে। একাকী থাকিতে ভয় পায় ।
মৃত্যুভয়, আত্নহত্যার প্রবৃত্তি, হতাশার জন্য রোগী একস্থান হইতে অন্য স্থানে চলিয়া যায় ।
ইহার রোগী কৃপণ, হিংসুটে, স্বার্থপর এবং ভীরু ।
অগোছাল ভাব এবং বিশৃঙ্খলা দেখিলে রোগী বিরক্ত হয় ।
কাল্পনিক গন্ধ পায় এবং কাল্পনিক দৃশ্য দেখে ।
পানির পিপাসা অত্যান্ত কিন্তু অল্প অল্প পানি পান করে।

আর্সেনিকের চরিত্রগত লক্ষন:-

শীঘ্র শীঘ্র শীর্ণতা প্রাপ্তি, একপ্রকার বিশেষ পিপাসা, অস্থিরতা, মধ্যরাত্রের পর রোগ বৃদ্ধি, জ্বালা ।
রোগী অনাবরত ছটফট করে ।
ঠান্ডা লাগা হেতু বেদনা বৃদ্ধি গরমে আরামবোধ ।
বার বার ঠান্ডা পানি পান করিতে ইচ্ছা, মৃত্যুভয় সবচেয়ে বেশী ।
পাকাশয়ে জ্বালা, শীতল ঘর্ম (ঘাম) – তৎসহ অবসাদ ।
শয়ন করিতে কষ্ট – মনে হয় যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হইয়া যাইবে ।
হাঁপানী বা উদরীতে শুইলেই টান এবং তাহার বৃদ্ধি ।
বরফ, জল প্রভৃতি আহার করার ফলে অর্জীন ও উদারময় ।
নাক দিয়ে জলের ন্যায় সর্দি নিগমন। নাক বন্ধ সর্দিতে নাক প্রায় হাজিয়া যায় ।
ক্ষত উত্তাপে উপসম ।
ঘন হলুদবর্নের শ্বেতপ্রদার – জননেন্দ্রিয়ের যেখানে লাগে সেখানে হাজিয়া যায় ।

আর্সেনিকের প্রয়োগ ক্ষেত্র :-

সাধারণ ফ্লু, অস্থিরতা, দুর্বলতা, অতিশয় জ্বালা, পিপাসা, কলেরা, জ্বরপীড়া, টাইফয়েড, উদারাময়, আমাশায়, চক্ষুপীড়া, সর্দিকাশি, হাচি, হাঁপানী, হৃৎপিন্ডের পীড়া, শোথ, চর্মপীড়া, অর্শ ক্ষত, ডিম্বকোষের পীড়া, রজঃস্রাব, এলবুমেনুরিয়া, মৃগী ও মুর্ছা প্রভৃতি পীড়ায় ইহা প্ররয়োগ হয় ।
আর্সেনিকের পিপাসা:- আর্সেনিকের পিপাসা প্রবল কিন্তু একসাথে অনেক জলপান করেনা, সামান্য সামান্য জলপান করে ।
অনেক সময় জলপান করা মাত্রই বমি হইয়া যায় ।
পুরাতন পিড়ায় আর্সেনিকে পিপাসা থাকেনা ।

আর্সেনিকের জ্বালার একটি বিশেষত্ব:-

গরমে, উত্তাপ প্রয়োগে, গরম ঘরে জ্বালার উপশম এবং ঠান্ডায় জ্বালার বৃদ্ধি। রোগী সেজন্য কাপড় খুলিতে চায়না।
পাকস্থলীর পীড়া, ক্যান্সার, ক্ষত, পুরাতন পীড়া, গর্ভাবস্থায় বমি প্রভৃতির সহিত যদি ছটপটানি ও জ্বালা থাকে তাহলে আর্সেনিক।
তরুন রোগের জ্বালায় আর্সেনিক ও পুরাতন রোগের জ্বালায় সালফার।

উদরাময় লক্ষন:-

ফলমূল, বরফ কিংবা অন্য শীতল দ্রব্য পান করিয়া পীড়া হইলে আর্স উপকারী । রোগীর পেটে অসহনীয় বেদনা হয় ।
বাহ্য সবুজ, হলদে, কালছে জলের মত এবং রক্তাক্ত, পরিমানে এত বেশী হয় না ।
বাহ্যে অত্যন্ত পঁচা, দুর্গন্ধ, তৎসহ গাত্রদাহ, ছটফটানি, পিপাসা এবং পান মাত্র পেটে অসহনীয় বেদানা ।
বমি জলের মত, রক্ত মিশ্রিত অথবা লালবর্ণের । রাত দুপুরে রোগের বৃদ্ধি এবং উত্তাপে বেদনার উপশম ।

আমাশয়ে লক্ষন :-

মুখে বিস্বাদ, ক্ষুধাহীনতা, আহারান্তে হিক্কা ।
খাদ্য দ্রব্য পাকাশয়ে পৌছামাত্র বমন ।
বারবার অল্প অল্প জল পান, প্রবল পিপাসা, পাকাশয়ে জ্বালা ।
পাকাশয় স্পর্স করিলে বেদনানুভব ।

চক্ষু পীড়া লক্ষন:-

চক্ষুর পাতা ফোলা, যন্ত্রণা, সেঁক দিলে যন্ত্রণা কমে ।
চক্ষু হইতে যে গরম জল নির্গত হয় তাহা তীক্ষ্ন স্বাদযুক্ত ।
চক্ষুর ভয়ানক জ্বালা ও যন্ত্রণা থাকে ।
চক্ষুর পাতা লাল, ক্ষতগ্রস্ত, মামড়ি পড়ে ।
আলোতে তাকাতে পারেনা ।

সর্দি কাশি লক্ষন:-

নাক দিয়া জলের মত পাতলা স্রাব নিঃসারিত হয় ।
নাসাপথ সর্বদা অবরুদ্ধ, কপালে দপদপ করে, মৃদু শিরঃপীড়া ও হাঁচি, হাঁচি আর্সের প্রধান লক্ষন ।
গরম ও জ্বালাজনক স্রাব। যেখানে লাগে হাজিয়া যায় ।
রোগী দুই প্রহর রাত্রির পর শয়ন করিতে পারে না ।
রোগী। ঘন ঘন কাশিতে থাকে, শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হয়, ইহাতে শ্বাসনালী শুষ্ক থাকে ।

শোথ লক্ষন:-

হৃৎপিন্ড, লিভার বা কিডনীর পীড়া হেতু শোথ ।
প্রথমে চক্ষু ও পায়ে এবং অবশেষে সর্বশরীরে শোথ জম্মে ।
রোগীর অতিশয় শ্বাসকষ্ট উৎপন্ন হয় ।
দুপুর ও রাত্রিতে শ্বাসকষ্ট উপস্থিত হয় ।
অতিশয় পিপাসা থাকে কিন্তু অল্প অল্প জল পান করে ।
ফোলা পায়ে ঘা হইলে সেই ঘা থেকে অনবরত রস পড়িতে থাকে ।

চর্মপীড়া লক্ষন:-

শুস্ক একজিমা, চর্মরোগে চর্মের উপর শক্ত টিবলীর মত ফুলিয়া থাকে ।
চর্মপীড়ায় প্রায়ই দুর্গন্ধ থাকে, মাথা হইতে কপাল পর্যন্ত প্রায়ই এই একজিমা বিস্তৃত হইয়া পড়ে ।
চুলকানোর পর অসহ্য জ্বালা থাকে ।
শীতল জলে চুলকানি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়, কিন্তু গরমে চুলকানির উপসম ঘটে ।

আর্সেনিকের বৃদ্ধি কখন :-

আক্রান্ত পার্শ্বে শয়ন করিলে, বেলা ১ টা হইতে ২ টার মধ্যে, রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরের পরে, ঠান্ডায় এবং শীতল বস্তু পানাহারে ।

আর্সেনিকের উপশম কখন :- মস্তক উঁচু করিয়া শয়নে ও সঞ্চালনে ।

আর্সেনিকের পরবর্তী ঔষধ :- আর্সেনিক আয়ড, ক্যামোমিলা, ক্যাল্ক ফস, আর্নিকা, বেলেডোনা, সাইকিউটা, থুজা, ফসফরাস, এপিস, নেট্রাম সালফ, লাইকো, ল্যাকেসিস ।

আর্সেনিকের ক্রিয়ানাশক ঔষধ :- নাক্স ভম, ওপিয়ম. নাক্স মস্কেট, সালফার, চিনিনাম সলফ, ক্যাম্ফর, গ্রাফাইটিস, ট্যাবেকাম, ভিরেট্রাম, চায়না, ইপিকাক, হিপার, আয়োডিন, মার্কুরিয়াস।

আর্সেনিকের মায়াজমের নাম :-

অ্যান্টিসোরিক
অ্যান্টিসাইকোটিক
অ্যান্টিসিফিলিটিক
অ্যান্টিটিউবার কিউলার ।

আর্সেনিকের ক্রিয়া স্থিতিকাল :- ৬০ দিন হইতে ৯০ দিন ।

আর্সেনিকের ব্যবহার শক্তি :- ৩০ হইতে সি এম শত্তি । সাধারণ ফ্লু, পাকস্থলী, অন্ত্র, কিডনী পীড়ায় নিম্ম শক্তি এবং অন্যান্য পীড়ায় উচ্চশক্তি ব্যবহার্য ।

অন্যান্য ওষুধ:- , করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কয়েকটি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ঃ ব্রায়োনিয়া এলবা, আর্সেনিকাম এলবাম, জেলসিমিয়াম, এন্টিম টার্ট, ক্রোটেলাস এইচ, ক্যাম্ফর, ওষুধগুলো লক্ষ্মণ ভিত্তিক প্রয়োগ করতে পারেন ।

বিঃদ্রঃ – সকল ঔষধ প্রয়োগ করার পূর্বে বা আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন ।

আর্সেনিক এলবাম একটি ভয়ংকর ঔষধ, সঠিক মাত্রা না জেনে খেলে বিপদ হতে পারে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *